ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘সর্বশেষ বিচার আল্লাহর দরবারে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
‘সর্বশেষ বিচার আল্লাহর দরবারে’ ছবি: সোহাগ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ন্যায়বিচারে আসামিরাই সর্বশেষ আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ ও ফাঁসির রায় বহাল থাকার প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি।



তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড বাতিলে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। চূড়ান্ত আইনি লড়াই চালিয়েছি। সাকা চৌধুরী একাত্তরে ঘটনার সময় পাকিস্তানে ছিলেন এবং মুজাহিদ কোনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না- সে বিষয়ে দালিলিক ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। আদালত সেসব বিবেচনায় নেননি, ফাঁসি বহাল রেখেছেন। আমরা হতাশ।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) মুজাহিদ ও সাকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দু’জনেরই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এরপর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে আমরা হতাশ। আমরা দু’জনেরই মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

মামলার বিষয়ে আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া অবশিষ্ট রইলো না, এখন কি করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, আইনগত আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। এখন ন্যায়বিচারের জন্য আসামিরা সর্বশেষ আল্লাহর দরবারেই ফরিয়াদ জানাবেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আসামিরা কি অপরাধ করেছেন সেটা তাদের বিষয়। আল্লাহর দরবারে সঠিক বিচার হয়েছে কি-না, সেটা আমারও প্রশ্ন।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং রায়ের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট আদালতে উপস্থাপন করেছি। যদিও এটা আমরা বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করতে পারিনি। শুধু সার্টিফিকেট নয়, কতোগুলো এভিডেভিটও দাখিল করেছি। যেখানে পাকিস্তানের বর্তমান কিছু নামি-দামি ব্যক্তিও রয়েছেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাদের সহপাঠী ছিলেন।

এলিবাই (সেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু আসামি উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করছেন) যেটাকে বলা হয় যে, আমি সেখানে ছিলাম না, সেটা প্রমাণের জন্য পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট এনে দাখিল করেছি বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার মাহবুব।

এ বিষয়ে আপিল বিভাগ জানতে চান, বিচার চলাকালে বিচারিক আদালতে (ট্রাইব্যুনালে) কেন দাখিল করিনি। পরবর্তী পর্যায়ে সেখানে দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু সার্টিফিকেট জেনুইন না, এ বলে আদালতের সন্দেহ হয়।

আদালত বলেছেন, পাকিস্তান এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিপক্ষে। সুতরাং পাকিস্তান থেকে যেকোনো সার্টিফিকেট আনা সম্ভব।

খন্দকার মাহবুব আরও বলেন, আসামিদের পক্ষে আমরা আইনি লড়াই করে হেরে গেছি। এখন পরবর্তী পর্যায়ে সেটা আসামির ওপর নির্ভর করে। কী কী পর্যায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’টি পর্যায় আছে, একটি সরকার চাইলে দণ্ডাদেশ মওকুফ করে দিতে পারেন অথবা কমাতে পারেন।

দ্বিতীয়টি হলো, আসামি ক্ষমা চাইলে সেটা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ক্ষমতা এবং আসামির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

সর্বোচ্চ আদালতের বুধবারের রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর মামলার আইনি লড়াই। তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টিও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছালো। সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তারা। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে যেকোনো সময় মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
এমএইচপি/এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।