ঢাকা: দেশে আবারো দুর্ভিক্ষের পদধ্বণি শোনা যাচ্ছে। ঢাকার নাভিমূলের যে সমস্ত রাস্তা ভিআইপি রোড বলে পরিচিত, যেসব রাস্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা যাতায়াত করেন, সে সমস্ত রাস্তার আশেপাশেই ডাস্টবিনে ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
রোববার (০৮ মে) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
দু:খ-কষ্টের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশের একটি বড় অনলাইন পত্রিকায় দেখা গেছে, রাজধানীতেই মানুষ কুকুর একসঙ্গে খাচ্ছে। কিছু ছবি দেখিয়ে বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, ব্যাংক শেয়ারবাজার লুটপাট করে জনগণের টাকা আজ সরকারি দলের নেতাদের পকেটে ঢুকেছে। জনগন অর্থশূন্য, কাজ নেই। তাই দেশে দুর্ভিক্ষ হাতছানি দিচ্ছে।
রিজভী বলেন, দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ কিছু মানুষের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর এর খড়গ নেমে এসেছে। কারণ, যারা বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাননি তারাই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন কিছুটা বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এ বেতন বৃদ্ধিতেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন চরম সঙ্কটাপন্ন।
তিনি বলেন, বৃহত্তর জনসমাজে আর্থিক ভারসাম্যহীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। অনেক টাকা দিয়ে সামান্য পরিমান আনাজ-পাতি কিনতে হয় ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের এখন নাভিঃশ্বাস উঠছে। উদরে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকলেও তারা মুখে কিছু বলতে পারছেন না। অনেকেই রাস্তার ভবঘুরে-ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছেন। আবারো সেই জয়নুল আবেদিনের চিত্রের মতো ডাস্টবিনে কুকুর মানুষ একসঙ্গে খাবার খুঁটে খাচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রমজানের প্রাক্কালে গতকাল একদিনেই রসুন প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৭০ টাকা, অর্থাৎ ১৬৭ শতাংশ। ছোলার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, পেঁয়াজসহ শাক-সবজির মূল্য বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। এবারের রমজান মাসে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, নেই কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা। ফড়িয়া-দালাল-মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সবকিছু নিজেদের ইচ্ছেমতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করায় সাধারণ মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এ সমস্ত কৃষিপণ্য বাজার অশুভ সিন্ডিকেশনের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
এদেশে বর্তমান ‘ভোটারবিহীন’ সরকারের সন্ত্রাস, সহিংসতা, গুম, হত্যাসহ আতঙ্কের এক অভূতপূর্ব বাতাবরণে একদিকে গণতন্ত্র অন্ধকারে হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে স্থান করে নিয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর হাহাকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে- সিইসি’র এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, গতকাল (শনিবার) ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে গোটা জাতি হতবাক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সহিংসতায় গতকালই ৮ জনের প্রাণ গেছে। ইউপি নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত ৭৯ জন মানুষের প্রাণ ঝরে গেছে। অথচ রকিবউদ্দীন আহমদ এটাকে ‘পানিভাত’ মনে করছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেননি, বরং তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারের চাকরি করছেন।
সরকারের প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রখ্যাত তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। অথচ আজকেও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে অর্ধেকের বেশি ব্যাংক। বাংলাদেশের রাজকোষ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেল। অথচ জনগণের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর এতো বড় একজন তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা থাকার পরও রাষ্ট্রীয় তহবিল হরিলুট হলো কী করে? তথ্য প্রযুক্তিদের বিশেষজ্ঞ অনেকেই বলেছেন- এ চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জড়িত। তবে সরকারের উঁচু মহলের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পেলে এ চুরির ঘটনা ঘটাতে সাহস পেতেন না তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুন উর রশিদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৬
এমএম/ এএসআর