ঢাকা: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যে ঐক্য জুলাইয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।
শনিবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য ও জুলাই চেতনা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১৬ বছরের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই সংঘটিত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান। আমরা বার বার লড়াই করে বিজয়ী হলেও সে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বীর সেনানীদের সবাইকে আমাদের ধারণ করতে হবে। এরাই রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছে। দুর্নীতি—অনাচার থেকে যদি আমরা জাতিকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমাদের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এজন্য অবশ্যই আমাদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য প্রয়োজন। যে ঐক্য জুলাইয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখবে।
তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব যতই থাকুক না কেন এরা কেউই অগণতান্ত্রিক দল নয়। সবাই গণতান্ত্রিক দল। কাজেই নির্বাচনের ব্যাপারে কারো কোনো বাধা আছে বলে আমি মনে করি না। নির্বাচনের প্রস্তুতি ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা সবই নির্বাচনের পক্ষে আছে। তাই আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত হলে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলেন, স্বৈরাচার বিরোধী ফ্যাসিবাদ লড়াইয়ে যারা ছিলেন, তাদের সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার বা ঐক্যমতের সরকার গঠন করা হবে। পতিত আওয়ামী লীগ এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই আমাদের এক যুগান্তকারী দলিল। জুলাই যোদ্ধারা ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের শহীদরা জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে থাকবে। জুলাই আমাদের ধর্ম—বর্ণ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে জুলাই শহীদদের রক্তের দাগ কখনো মুছা যাবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র—জনতার অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। এ অভ্যুত্থানে শ্রমিক, রিকশাচালক, শ্রমজীবী, ছাত্র—জনতাসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমাদের তরুণরা। আমাদের সৎ, মেধাবী ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বৈষম্য, অন্যায়—অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্টের আগমন ঘটতে না পারে। তাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে জুলাই বিপ্লবের চেতনা বৃথা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত
সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কোনো টালবাহানা চলছে কিনা? দেশবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে লন্ডন ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কারণ জাতীয় নির্বাচন যত দেরি হবে ততই ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। দ্রুত জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে যেভাবে চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাস, মাজার ভাঙা, লালন সঙ্গীত বন্ধ করা, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রশ্ন তোলাসহ যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে তা বাড়তে থাকবে। আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটবে। মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করবে। তাই আর কোনো অনৈক্য নয়, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের পথ সুগম করবে বলে তিনি আশা করেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যই জুলাই চেতনা সমুন্নত রাখতে পারবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক মো. লুৎফর রহমান, সাংবাদিক মাইদুর রহমান রুবেল ও সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
এমএমআই/আরআইএস