উত্তরাঞ্চর ঘুরে: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর হাতেনাটে আটক শরিফুল ইসলাম ওরফে সোহান ওরফে মুত্তাকিনের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায়। তাদের পুরো পরিবারই জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত।
আটক ‘জঙ্গি’ শরিফুলের বাবা পেশায় রেডিও-টিভি’র ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনায় করা একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নিজেও বাড়িতে থাকেন না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় কাঁচা তরকারির ব্যবসা করেন শরিফুলের বাবা।
ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে দুই পুলিশকে হত্যার পর শরিফুল আটক হওয়ার পরই আত্মগোপন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরাও। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারের পাশে প্রত্যন্ত গ্রাম দক্ষিণ দেবীপুরের বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ঈদের দিন বাড়িতে শরিফুলের মা ও দুই বোন ছিলেন। কিন্তু, সন্ধ্যায় শোলাকিয়ার হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা জানাজানি হওয়ার পর রাতেই তারা বাড়ি ছাড়েন।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে,শরীফুলদের আদি বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের মারুপাড়া গ্রামে। তবে ৫ বছর ধরে তারা বসবাস করছেন রানীগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ দেবপুর গ্রামে। দাখিল পাস করার পর থেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন সোহান। সে বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসায় পড়তো। এখানেই সে পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা শওকত জামানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গো্বিন্দগঞ্জে জঙ্গি উত্থানের পেছনে রয়েছেন প্রাইমারি শিক্ষক মির্জা মোহাম্মদ শওকত জামান প্রধান ওরফে রফিকুজ্জামান প্রধান। পিতা মৃত খায়রুজ্জামান (অব. জেলা সমবায় কর্মকর্তা)। বাসা শিল্পপাড়া। স্থায়ী ঠিকানা পারা কচুয়া, বারোকুঠি। তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পৌর জামাতের সেক্রেটারি পদেও নির্বাচিত হন। রংপুরের কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময়েই তিনি ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে যোগ দেন।
গোবিন্দগঞ্জে ফিরে তিনি শহরের ঠাকুরবাড়ি এলাকায় একটি ইসলামী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং হিলফুল ফুজুল নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। এ সময় বাংলাভাইসহ নানা জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে তার সদ্ভাব গড়ে ওঠে। দুধর্ষ জঙ্গি নেতা জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে তিনি জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে বলে অভিযোগ আছে। জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে তার বাড়ি এক কিলোমিটারের মধ্যে। জাহাঙ্গীরের বাড়ি একই এলাকার শিবপুর ইউনিয়নের মালঞ্চ গ্রামে। কিছুদিন আগেই (৮ জুন দিবাগত রাতে) জাহাঙ্গীরের বাড়িতে বন্দুবযুদ্ধে নিহত হয় জেএমবি ক্যাডার বগুড়ার তুহিন।
গোবিন্দগঞ্জ শহরের শিল্পপাড়া, সোনারপাড়া, মাগুরা, কেশবপুর, চাঁদপুর, খলশী, বোয়ালিয়া এলাকায় তার নেতৃত্বেই উগ্রবাদিদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বাড়ছে বলে অভিযোগ আছে। এই এলাকাগুলো জামাত অধ্যুষিত বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঘোষিত দল ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের উদ্দেশ্য পূরনের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন এই স্কুল শিক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৬
আরএম/জেডএম