ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন পিছিয়ে আগামী ০৬ অক্টোবর পুনর্নির্ধারণ করেছেন আদালত। ওইদিন খালেদা জিয়াকে হাজির থাকতে ও হাজিরা নিশ্চিত করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশও দিয়েছেন।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষীদের জেরা ও পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর।
দুই ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে পেছানোর আবেদন জানান। সময়ের আবেদনে এর কারণ হিসেবে জামায়াতের ডাকা হরতালে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ ও হজ পালনে আগামী ০৮ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সৌদিতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন আইনজীবীরা।
সময়ের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন খালেদার আইনজীবী জয়নাল আবেদিন মেজবাহ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও জাকির হোসেন।
এ আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন পিছিয়ে আগামী ০৬ অক্টোবর পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত। খালেদা জিয়াকে ওইদিন অবশ্যই হাজির থাকতে ও হাজিরা নিশ্চিত করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশও দেন। আদালত আইনজীবীদের বলেন, লম্বা সময় দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই আসামিকে হাজির করবেন।
মামলাটিতে জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইতোমধ্যেই আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদসহ মোট ৩২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এরপর শুরু হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও পুরনো সাক্ষীদের জেরা। সাক্ষ্য দেন ২৭তম সাক্ষী বগুড়ার নন্দিগ্রাম ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এবং ২৮তম সাক্ষী বগুড়ার গাবতলী ভূমি কার্যালয়ের তৎকালীন সার্ভেয়ার ও সিরাজগঞ্জের চৌহালি ভূমি কার্যালয়ের বর্তমান কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল। সাক্ষ্য শেষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর দুই সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরার দিন ধার্য করেন আদালত।
এরপর ২৪তম সাক্ষী প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি আমজাদ হোসেন ও ২৫তম সাক্ষী প্রাইম ব্যাংকের ভিপি মোল্লা ফরিদ আহমেদকে আংশিক জেরা করেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তাদের অসমাপ্ত জেরা ও ২৬তম সাক্ষী সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত খন্দকার আব্দুস সাত্তারকেও আসামিপক্ষের জেরার দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন। তারা আদালতে হাজির ছিলেন এবং খালেদা ও তারেক রহমানের পক্ষে তাদের আইনজীবী হাজিরা দাখিল করেন।
অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকি দু’জন জামিনে আছেন।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
এমআই/এএসআর