ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ফুটপাতে শুয়ে থাকবো’, বাড়ির সামনে মওদুদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৭
‘ফুটপাতে শুয়ে থাকবো’, বাড়ির সামনে মওদুদ বাড়ির সামনে মওদুদ

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রাজউকের অভিযান চলাকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘কি আর করবো? রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকবো’।

বাড়িটিতে তিন যুগ ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন মওদুদ। গত রোববার (০৪ জুন) এ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ খারিজ করে দেওয়া চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, বাড়ির মালিকানা তার বা তার ভাই মনজুর আহমেদের নয়।

এর তিনদিনের মাথায় বুধবার (০৭ জুন) দুপুর থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাড়িটি অধিগ্রহণ করছে রাজউক।

ইতোমধ্যেই বাড়ির ভেতর থেকে মওদুদ পরিবারের মালামাল বের করে এনে ট্রাকে তোলা হয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযান শুরুর সময় বাড়িতে ছিলেন না মওদুদ। দুপুর তিনটার পরে বাড়িটির সামনে এসেছেন তিনি। কিছুক্ষণ গেটের সামনে বসে থেকে মালামাল সরাতে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করেন। তবে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ তাকে সরিয়ে গেটের একপাশে বসিয়ে দেন।

বের করে আনা হচ্ছে মওদুদের বাসার মালামাল/ছবি: বাদলপরে রাজউকের এ উচ্ছেদ অভিযানে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ।

‘এখন কি করবেন?’- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার আর কি করার আছে? কি আর করবো? রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকবো’।

অথচ দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে হেরে যাওয়ার পরও সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের দিন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের এই আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বাড়ি ছাড়বো না। আমার বোঝাপড়া মূল মালিকের সঙ্গে। সরকার বা রাজউকের সঙ্গে নয়’।

‘সরকার বা রাজউক সরে যেতে বললে কি করবেন?’- সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘দেশে কি আইন নেই? আমি আইনের আশ্রয় নেবো’।

আর বুধবার অবৈধ দখল বজায় না রাখতে পেরে এরশাদ সরকারের সাবেক এই উপ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জোরের বিরুদ্ধে, বেআইনি শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কি করার আছে?’

আগেরদিনও মওদুদ বলেছিলেন, তিনি বিএনপি করেন বলেই সরকার সাত বছর পরে মামলায় আপিল করে তাকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। আর বুধবারও বললেন, ‘বিরোধী দল করি বলেই তো আমার এই অবস্থা। সরকারি দলের কারো সঙ্গে এ রকম করতে পারতো?’   

বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

এরপর ১৯৭৩ সালের ০২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আম মোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে দু’ভাইয়ের বিরুদ্ধে বাড়ি আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে অবশ্য মওদুদের আবেদনে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের লিভ টু আপিলের রায়ে গত বছরের ০২ আগস্ট হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। এর পুনর্বিবেচনা চেয়ে মওদুদের রিভিউ আবেদনটি গত রোববার খারিজ হওয়ায় বাড়িটি তাকে ছাড়তেই হবে বলে নির্ধারিত হয়ে যায়।    

অবশ্য চূড়ান্ত ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুদকের দায়ের করা বাড়ি আত্মসাতের মামলা থেকে মওদুদ ও তার ভাইকে অব্যাহতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।   

বাংলাদেশ: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৭
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।