আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘরোয়া আলোচনায় দলটির নেতারা বার বার বলছেন, জোটের এই দুই শীর্ষ নেতাকে অন্য শরিকদের সঙ্গে মেলানো যাবে না। এ দু’জনের হিসাব একটু আলাদা।
কারণ, সর্বশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে (নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) নৌকার প্রবল জোয়ারের মধ্যেও অলি আহমদ ও আন্দালিব রহমান পার্থ নিজস্ব ভোটব্যাংক, ইমেজ, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সেবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে গিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন অলি আহমদ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে পরাজিত হলেও চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বচিত হন তিনি।
ওই নির্বাচনে অলি আহমদের ছাতা প্রতীকে ভোট পড়ে ৮২ হাজার ৩৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফসার উদ্দিন আহমদের নৌকা পায় ৬১ হাজার ৬৩৬টি ও বিএনপির প্রার্থী মো. মিজানুল হক চৌধুরীর ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়ে ৩৩ হাজার ৩৫টি।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট মনোনীত জামায়াতের প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের কাছে পরাজিত হলেও ড. অলি আহমদ ভোট পান ৬২ হাজার ৭৯০টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪৯ হাজার ৫০৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
এসব পরিসংখ্যান মাথায় রেখে জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা অলি আহমদকে নিয়ে আলাদাভাবে ভাবছে বিএনপি। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অলির বিষয়ে দায়বদ্ধতা আরো বেড়েছে জোট নেতা খালেদা জিয়ার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলডিপির জন্য অন্তত ছয়টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। তবে দলটির প্রত্যাশা আরো বেশি।
দলীয় সূত্রমতে, এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ চট্টগ্রাম-১৩, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ কুমিল্লা-৭, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল করিম আব্বাসী নেত্রকোনা-১, আবদুল গণি মেহেরপুর-২, আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান জয়পুরহাট-২ অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ চাঁদপুর-৪, নুরুল আলম চট্টগ্রাম-৭, কফিলউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ ও কামালউদ্দিন মোস্তফা মাগুরা-২ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অলি আহমদ বলেন, ‘আমার দলে যোগ্য নেতার সংখ্যা অনেক। একাধিকবার এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন, এ রকম নেতার সংখ্যা বিএনপির পরেই এলডিপিতে সবচেয়ে বেশি। তাদের জন্য আমরা মনোনয়ন চাইবো’।
অন্যদিকে মাঠের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় না হলেও সংসদে ঝড় তুলতে পারঙ্গম আন্দালিব রহমান পার্থ’র বিষয়টিও বিএনপি আলাদাভাবে দেখছে। রাজনীতিতে তরুণদের ‘আইকন’ হয়ে ওঠা পার্থ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
জোটের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনেও পিছিয়ে নেই আন্দালিব রহমান পার্থ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় সরকার’-এ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তরুণ এই নেতা। কিন্তু জোট ও জোট প্রধানের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি। এসব কারণে পার্থ’র প্রতিও বিশেষ ‘নজর’ আছে জোট নেতা খালেদা জিয়ার।
এদিকে শুধু ধানের শীষের ভোট নয়, ভোলায় পার্থ’র নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। তার বাবা প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু এক সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ভোলায় নির্বাচন করতেন।
এসব দিক বিবেচনা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পার্থ’র জন্য ভোলা-১ ও ২ নম্বর আসন ছেড়ে দেন খালেদা জিয়া। ভোলা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তার ছোট ভাই আশিকুর রহমান।
সূত্রমতে, এবারও একাধিক আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজেপির চেয়ারম্যান পার্থ। নিজের তারুণ্যের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার একটি আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চান তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা একাধিক আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। জোট থেকে মনোনয়ন দিলে বিজয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী’।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৭, আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা
এজেড/এএটি/এমএইউ/এএসআর