রোববার (০৯ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ০৮ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির শুনানি শুরু হয়েছিল।
এরই মধ্যে মওদুদ আহমদ ওই বেঞ্চ থেকে আউট অব লিস্ট (কার্যতালিকা থেকে প্রত্যাহার) করে বর্তমান বেঞ্চে উত্থাপন করেন।
মওদুদের পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী এবং রাজউকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।
শুনানিতে আদালত বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পর উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনি (মওদুদ) নিম্ন আদালতে মামলা (স্যুট) দাখিল করেছেন। ওই মামলা বিচারাধীন অবস্থায় হাইকোর্টে রিট চলতে পারে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের বিধি-নিষেধ আছে’।
‘নিম্ন আদালতের মামলা প্রত্যাহার করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আপনাদের। তবে দুই সপ্তাহের সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানান’।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর গত ০৪ জুন রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর বাড়িটিতে মওদুদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের মালিকানা অবৈধ বলে এ সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর তিনদিন পর গত ০৭ জুন বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মওদুদের দখলমুক্ত করে বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সিলগালা করে রাখে সংস্থাটি।
এর ১৮ দিনের মাথায় গত ২৫ জুন ডুপ্লেক্স বাড়িটি ভেঙেও ফেলেছে রাজউক।
ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে মালিকানা পান তিনি। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আম মোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই।
মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও ০৪ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে ৩৬ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসা বাড়িটি ছাড়া মওদুদের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে।
চূড়ান্ত রায়ে হেরে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মওদুদ বলেছিলেন, ‘দেশে কি আইন নেই? আমি আইনের আশ্রয় নেবো। আদালতের আশ্রয় নেবো’।
এরপর উচ্ছেদের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে নিম্ন আদালতে স্যুট মামলা ও হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মওদুদ।
মওদুদের চেম্বারের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হাইকোর্টে করা রিট আবেদনে দু’টি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাড়িটির নকশায় যেন কোনো ধরনের পরিবর্তন না আনা হয়। অন্যটিতে সেখানে তার থাকার অধিকার ফিরে পেতে নির্দেশনা চান মওদুদ আহমদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর