সোমবার (০৭ আগস্ট) এসব আদেশ দেন রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে এ আদালতে।
প্রথমে চ্যারিটেবল মামলায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নুর আহমেদকে খালেদার পক্ষে পুন:জেরা করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
এরপর অরফানেজ মামলার আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই আসামি ৭০ জন সাফাই সাক্ষীর তালিকা দিয়েছেন। প্রথম দিনে তার আয়কর উপদেষ্টা শাহজাহান সিরাজ আংশিক সাক্ষ্য দেন।
এগুলো মুলতবিসহ অরফানেজ মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন এবং তার জামিন বাতিলের বিষয়ে আদেশের দিন ১৭ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত।
জামিনে থাকা চ্যারিটেবলের অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান এবং অরফানেজের অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) আদালত খালেদা জিয়া অনুমতি ছাড়া বিদেশে যাওয়ায় এবং অন্যরা সাফাই সাক্ষীদের তালিকা ও সাক্ষ্য না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন সকলের জামিন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছিলেন। একইসঙ্গে আসামিরা মামলা বিলম্বিত করছেন ও আদালতকে বিচারে সহায়তা করছেন না বলে উষ্মা প্রকাশ করেন।
পরে অন্য আসামিরা আদালতে হাজির আছেন ও সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিয়ে দেবেন বলে কারণ দর্শান তাদের আইনজীবীরা। আর খালেদার আইনজীবীরা জানান, তিনি ১৫ সেপ্টেম্বরের দিকে দেশে ফিরবেন।
আদালত অন্যদের জামিন বহাল রাখলেও খালেদার জামিন বাতিলের বিষয়ে ০৭ আগস্ট আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন।
দুদকের আইনজীবী অ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজলও আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়ায় ও অনুপস্থিত থাকায় গত ২০ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলেন।
চ্যারিটেবলে গত বছরের ০১ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে শুরু করেন খালেদা। কিন্তু ওইদিন বক্তব্য শেষ না হওয়ায় সময় চান তিনি। এরপর কয়েক দফায় আদালতে না গিয়ে সময় বাড়িয়ে নেন। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে নানা আবেদন ও অসুস্থতার কথা বলে বেশ কয়েকবার পিছিয়ে নিয়েছেন অরফানেজে আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বিদেশে থাকা তারেক রহমানকেও পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
এ মামলায়ও সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
২০১০ সালের ০৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ০৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এমআই/এএসআর