আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২৩তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী করবে তিনিই দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কাকে দলের প্রার্থী করা হবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। যাদের নাম আলোচনায় আছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তাকে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি করার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানান ওই নেতারা।
চলতি বছর ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এড়াতে এ সময়ে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় একজন দক্ষ, সাহসী এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা জরুরি মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। সেদিক থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শতভাগ যোগ্য বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা বর্তমান রাষ্ট্রপতি সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে নিয়ে কোনো বিতর্কও নেই। এ কারণে আব্দুল হামিদকেই আরেকবার রাষ্ট্রপতি করার সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি। তিনি রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সাংবধানিক জটিলতাও নেই। সংবিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি দুইবার রাষ্ট্রপতি হতে পারেন।
দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ জাতীয় চার নেতার একজন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি দুই দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক দক্ষতা ও মেধা দলের জন্য প্রয়োজন রয়েছে। তাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে দলের রাজনীতিতে সরাসরি তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না। সে বিষয়টিও বিবেচনা করার ব্যাপার রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার নামও আলোচনায় রয়েছে। শেখ রেহানা পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন বলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে তিনি এই দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন কি না তার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে।
এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আলোচনায় রয়েছে। দেশের জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিসরেও সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকেও রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হতে পারে।
তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা জানান, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। আগামী দিনের জন্য তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তিনিই হবেন বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ