ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার দুর্নীতি মামলা

উচ্চ আদালতেও টেকেনি আবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৮
উচ্চ আদালতেও টেকেনি আবেদন

ঢাকা: দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারিক আদালতে চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি)। এরপর রায় সাপেক্ষে উভয় পক্ষের জন্য হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু বিচাররিক আদালতে মামলা চলার সময় নানান ইস্যুতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

যেটি মামলা দায়েরের পর থেকে শুরু হয়ে চলছে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।

কেউ কেউ বলছেন, অন্তত ৩০টি আবেদন হবে। আবার দুদকের আইনজীবীদের মতে, সেটা ৩০ থেকে ৪০ বারের মতো হবে। তবে রায়ের আগের দিন কোনো পক্ষের আইনজীবীরাই এ নিয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।

২০০৮ সালের ০৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এতিমদের সহায়তার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ আসামি মোট ছয়জন।

বিচারিক আদালতে বিচার কার্যক্রম চলার সময় হাইকোর্টে যেসব আবেদন করা হয়েছিলো সেগুলো হলো-

এক. মামলা বাতিলের আবেদন

২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর খালেদা জিয়া মামলা বাতিলের জন্য আবেদন জানালে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলা বাতিলের রুলের ওপর শুনানিতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ওপর অনাস্থা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে আদালত এ অনাস্থার আবেদন খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল-হক ও বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়ার বেঞ্চ পরিবর্তন করে বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের বেঞ্চের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ আদেশের পর ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মামলাটি বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ ও বিচারপতি এসএইচ মো. নূরুল হুদা জায়গীরদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগেও এ আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

দুই. অভিযোগ গঠনের বৈধতা

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট এ মামলায় দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। যেটা ২৩ এপ্রিল বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর একই বছরের ২৪ নভেম্বর আপিলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

তিন. বিচারক নিয়োগের বৈধতা

অভিযোগ গঠনের আদেশদানকারী বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জের পর ২০১৪ সালে ২৫ মে খালেদা জিয়ার এ রিট আবেদনের বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব বিচারিক আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন ও পাশাপাশি রুল জারি করেন। অপরদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ খালেদা জিয়ার রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।

বিভক্ত আদেশ দেয়ায় প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করেন রিট নিষ্পত্তি করতে। ১৯ জুন একক বেঞ্চ তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে তা খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন।

আদালত বদল

উচ্চ আদালত বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতার রিট খারিজ করলেও ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার বাসুদেব রায়কে বদলি করেন। তার স্থলে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিচারক আবু আহমেদ জমাদার পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে এই আদালত বদলে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছিলো খালেদা জিয়া। বিভিন্ন সময়ে এটার শুনানি হলেও ফলাফল কি হয়েছে তা পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে ওই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করে খালেদা। এরপর ২০১৭ সালের ০৮ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে থেকে মামলাটি ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করে ৬০দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে চলছিল। দেড় মাস না যেতেই এই বিচারকের প্রতিও অনাস্থা দেন খালেদা। ওই বছরের ১৪ মে কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত থেকে পরিবর্তন করে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে চালানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরবর্তীতে একই বছরের আগস্টেও বিচারকের প্রতি অনাস্থা দেন খালেদা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট হাইকোর্ট মামলাটি যে আদালতে বিচারাধীন সেখানে চলবে বলে কিছু পর্যবেক্ষণসহ খালেদার আবেদনের নিষ্পত্তি করে দেন।

পাঁচ. সাক্ষীর জেরা এবং পুনঃতদন্তের আবেদন

ওই সব আবেদনের ফাঁকে ফাঁকে সাক্ষীদের জেরা বাতিল, পুনঃজেরাসহ মামলার অংশ বিশেষ পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া।

এই মামলায় অর্থের উৎস সম্পর্কিত অংশ পুনঃতদন্তের জন্য খালেদা জিয়ার করা আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণসহ আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ২ জুলাই খারিজ করে দেন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ১১ সাক্ষীর জেরা চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন গত বছরের ২২ আগস্ট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আপিল বিভাগে আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।