কষ্টের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জেলে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া হাওয়া ভবন খ্যাত দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তার ছেলে ছাড়া এমন কোনো বিশ্বস্ত নেতা পেলেন না যাকে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দিতে পারেন। আর বিএনপির এতো শীর্ষ নেতার মধ্যে কেউই খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারেননি বলে সেই সব নেতাদের জন্য আমার করুণা হয়।
শামীম ওসমান আরো বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে এই দলটি আদর্শিক নয়। বিএনপি এখন একটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। তাই বিএনপির জন্য আমার ফ্রি উপদেশ হল, জনগণের কাছে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পেতে হলে খালেদা জিয়ার কারা সঙ্গী ফাতেমা বেগমকে দলের চেয়ারপারসন করা উচিত। তাহলেই দেশের মানুষ তাদের দিকে কিছুটা হলেও করুণার দৃষ্টিতে তাকাবে। কারণ, ফাতেমা সৎ ও বিশ্বস্ত এবং ত্যাগী। তার নেত্রীর জন্য তিনি বিনা কারণে জেল খাটছেন, এতিমের টাকা মেরে যান নি। তার পেশা যাই হোক না কেন, তিনি কাজ করে খান। তাই বিএনপির জন্য ফাতেমাই একমাত্র চেয়ারপারসন হওয়ার যোগ্য বলে মনে করি।
শনিবার (২৪ মার্চ) বিকেলে শহরের বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আয়োজিত এক কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, একজন মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি পাপের শাস্তি ইহকাল ও পরকাল দু’টোতেই হয়। বিএনপির এই করুণ অবস্থার কারণ হলো- তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে। শুধু মানুষ নয় বোবা প্রাণিও তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আগুনে জীবন্ত পুড়ে মেরেছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে, সাধারণ মানুষের সম্পদ পুড়িয়েছে। জীবন্ত পুড়ে মারা যাওয়া মানুষগুলোর অভিশাপ থেকে তারা রক্ষা পাবেনা। বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসও করে না, করতে জানেও না। বিএনপি শুধুমাত্র আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে জানে। হয়তো একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আদালত বিএনপি নেত্রীকে মাফ করে দেবেন কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, তিনি নীলকন্ঠ। কিন্তু যারা আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে মহান আল্লাহ তাদের মাফ করবেন কিনা সেটা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন।
শামীম ওসমান বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা ৭১’এ মা-বোনের সম্ভ্রমকে পাক সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে সেই রাজাকারদের মন্ত্রী করছেন আপনি। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছেন, জাহাজ ভরে দেশে অস্ত্র এনেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশকে দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এমনকি নিজের সন্তানদেরও দুর্নীতিবাজ ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
‘আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মাদার অব দ্য হিউম্যানিটি’ হিসেবে ভূষিত হয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছিলেন আর তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা আজ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থান করে নিয়ে এদেশের মানুষকে অনন্য সম্মান এনে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা রত্নগর্ভা মা। তারা বাবা-মা পরিবার পরিজন হারিয়ে শত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও নিজের সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করেছেন, যারা দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনছেন। অপরদিকে খালেদা জিয়া আপনি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, ভাবী হয়ে সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েও সন্তানকে বানিয়েছেন দুর্নীতিবাজ। সময় থাকতে জনগণের কাছে ক্ষমা চান। জনগণ ক্ষমা করলে আল্লাহও আপনাকে ক্ষমা করতে পারেন’।
কর্মী সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী আমাদের শিখিয়েছেন- ‘রাজনীতি হল একটি ইবাদত’। কারণ, রাজনীতির মাধ্যমে মানুষকে খুশি করতে পারলে আল্লাহকে খুশি করা যায়। নি:স্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করাই মানে আল্লাহকে খুশি করা। তাই শেখ হাসিনাকে আবারো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ বা আমাদের জন্য নয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য।
শামীম ওসমান নেতা কর্মীদের সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলার মানুষ আজ বুঝে গেছেন, এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কার থাকা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এসএইচ