ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার শুনানিতে হৈ চৈ, প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৮
খালেদার শুনানিতে হৈ চৈ, প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে আপিল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের সময় আইনজীবীরা হৈ চৈ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

শুনানির শেষ পর‌্যায়ে বুধবার (৯ মে) অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি খণ্ডন করতে গেলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হৈ চৈ শুরু করেন। তখন তাদের প্রতিউত্তরে সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও উচ্যবাচ্য করেন।

এসময় প্রধান বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উভয়পক্ষের আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব না।
 
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি শুরু করেন।
 
শেষ দিনে খালেদা জিয়ার জামিন বহালের পক্ষে পর‌্যায়ক্রমে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মওদুদ আহমদ। পরে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদার আইনজীবীদের দেওয়া যুক্তিগুলোর জবাব দেন।
 
শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দুদকের মামলায় কারাদণ্ড হয়েছিলো। তাদের হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। এছাড়া মশিউরের জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের পর আপিল বিভাগ তার জামিন বহালও রেখেছেন। এ ধরনের ৯৯.৯৯ শতাংশ মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেনি।
 
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে অ্যাবান্ডন জেলে রাখা হয়েছে। শুধু নামের সঙ্গে জেল থাকলে জেল হয় না। এটা এক সময় কারাগার ছিল। কিন্তু সেটাকে এখন নতুন করে কারাগার ঘোষণা করা হয়নি।
 
হাইকোর্টের জামিনের আদেশের ব্যাপারে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা মনে করি হাইকোর্ট তার বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, লঘু সাজা সব বিবেচনায় যথাযথভাবেই জামিন দিয়েছেন। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিচারের স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে এই জামিন বহাল রাখা হোক।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ভারতের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার চার বছর সাজা হয়েছিল। সাত দিনের মধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেন। আর লালু প্রসাদ যাদবের ৫ বছরের সাজায় দুই মাসের মাথায় সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেন। সুতরাং, খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখার আবেদন করছি।
 
তিনি সারা দেশের মামলার হিসাব সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান। পত্রিকা উদ্ধৃত করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে ৩০ লাখের উপরে মামলা। এর মধ্যে হাইকোর্টে ৪ লাখ ৭৬ হাজার। আর আপিল বিভাগে আছে ১৬ হাজারের ওপরে। লাখ লাখ মামলা থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার মামলা দ্রুততার সঙ্গে শুনানি করতে চান কেন অ্যাটর্নি জেনারেল?
 
জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কোন কর্তৃত্ব বলে এ মামলায় শুনানি করেছেন। আইন তো তা অনুমোদন করে না।
এ সময় আদালত বলেন, তাহলে আপনারা কেন আপিলে রাষ্ট্রকে পক্ষ করলেন? জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। করতে হয় তাই করেছি। বিশেষ আইনের মামলা বিশেষভাবেই দেখতে হবে। সরকার ভিন্ন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এই আপিল করেছে।

খালেদা জিয়া ঘাড়ে, হাতে সমস্যার কথা উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে দেখেছি।  তাকে জামিন দেওয়া হলে আজ তার শারীরিক অবস্থার এতো অবনতি হতো না। আদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালত। সুতরাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবে। তার জামিন বহাল রাখার আবেদন করছি।
 
খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে না। পিক অ্যান্ড চুজও করছে না। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ক্ষেত্রেও আপিল করেছে। নাজমুল হুদার মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যেসব মামলার উদাহরণ দিয়েছে, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই দেড় থেকে দু’বছর কারাভোগ করেছেন আসামিরা। এ কারণেই আদালত জামিন দিয়েছেন।

তিনি হাইকোর্ট বিভাগে দ্রুত খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তিতে একটি বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন।

শুনানির শেষ পর‌্যায়ে এসে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মশিউর রহমানের মামলা ও খালেদা জিয়ার মামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স করা হয়েছে। সেটা কীভাবে তা আমি দেখাচ্ছি।

এরপর তিনি একটি নথি দেখে কবে বিদেশ থেকে টাকা এসেছে তা পড়ে শোনাতে গেলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা হৈ চৈ শুরু করেন।

হট্টগোলের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল উত্তেজিত হয়ে বলেন, রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গেছে, এটা বলতে পারবো না?। এটা আমাকে বলতে হবে।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি উত্তেজিত হবেন না, রিপ্লাই (খালেদার আইনজীবীদের শুনানির জবাব) দেন।

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার পক্ষে এ অবস্থায় শুনানি করা সম্ভব না, কাল শুনানি হোক। একথা শুনে বিএনপির আইনজীবীরা আরও বেশি হৈ চৈ করতে থাকেন। তখন সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও উচ্যবাচ্য শুরু করেন।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, উভয়পক্ষের আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব না।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) এই রোগ নিয়েই রাজনীতি করে আসছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। এটা তার সহনীয়। এ যুক্তিতে জামিন হতে পারে না।

শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি যখনই বলি যে, টাকাটা এসেছিলো প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে এবং সেখান থেকে টাকাটা চলে গেছে জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্টে, তখনই তাদের সমর্থক আইনজীবীরা চিল্লাচিল্লি করে আমার বক্তব্য প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। কথাটি বললে কেন তারা উত্তেজিত হয়ে যায়? আমি বুঝি না।
তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এমন কতগুলো বক্তব্য দিচ্ছিলেন যেগুলো মামলার রায়ের মধ্যে নাই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অসম্মান করে কিছু বক্তব্য রাখছিলেন। সেটা আমরা আপত্তি দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।