আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দলটির বিদেশ নির্ভর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। ভারতকে তাদের পক্ষে তুলে ধরতে গিয়ে ভারতবিরোধী পুরনো অবস্থানও স্পষ্ট করেছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। এই সফরের পর দলটির নেতারা প্রচারে আনছেন বিএনপির প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
বিএনপির এই অবস্থান সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, বিএনপি এদেশের জনগণের ওপর আস্থা স্থাপন না করে, ভরসা না রেখে ভারতের কাছে বারবার ধর্না দিচ্ছে। বিএনপির এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাদের দ্বিচারিতা এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা বিএনপির অতীতের ভারতবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে এ দেশ ভারত হয়ে যাবে, ভারত দখল করে নেবে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির সময় বলা হয়েছে ফেনী পর্যন্ত ভারতের দখলে চলে যাবে, এমনকি ধর্মীয় বিভিন্ন ধরনের উস্কানিও দেওয়া হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করার তৎপরতা চালিয়েছে বিভিন্ন সময়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই গোষ্ঠীগুলো বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে বলে ভারতের অভিযোগ ছিলো। এখন বিএনপি নিজেদেরকে ভারতমুখী হিসেবে ও ভারতের সঙ্গে দলটির ভালো সম্পর্ক বোঝানোর চেষ্টা করছে। আর সেটাও শুধু ক্ষমতায় যাওয়াকে টার্গেট করে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত নিয়ে বিএনপির নেতারা যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে সেটার মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের প্রতি তাদের আস্থাহীনতাও প্রকাশ পেয়েছে। ভারতে ২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন এবং বিজেপি ক্ষমতায় আসার সময়ও এ ধরনের একটা রাজনৈতিক আবহাওয়া তৈরির চেষ্টা করেছিলো বিএনপি। এখন আবার নতুন তৎপরতায় লিপ্ত। এটা বিএনপির ভাওতাবাজি ও প্রপাগান্ডা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা বিএনপির দৈন্য, হীনতা, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছুই না। কোনো একটি রাজনৈতিক দল যার ন্যূনতম গণভিত্তি আছে সেই দল এ ধরনের কথা বলতে পারে না। বিএনপির নেতারা যে সব কথা বলছে তাতে দলটির দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সময় তারা সেসব কথা বলেছে সেটা দেশের মানুষ জানে। খালেদা জিয়া বলেছেন ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। এরা আসলে জনগণের ওপর ভরসা না করে স্বর্ণলতার মতো অন্যের ওপর ভর দিয়ে চলতে চায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি এক সময় কোনো কারণ ছাড়াই ঢালাওভাবে ভারতের বিরোধিতা করেছে। তারা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা চুক্তির বিরোধিতা করেছে। দলটি যে ভারতবিরোধী নীতির পরিবর্তন করেছে সেটা তো তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও দেয়নি বা দলীয় ফোরামের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিএনপির নেতারা ভারতের কোন নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আমরা জানি না। আসলে বিএনপির অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই ভাওতাবাজি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির রাজনীতি আসলে অন্ধকারের রাজনীতি। তারা সব সময় জনগণের ওপর আস্থা না রেখে বিদেশি প্রভুদের রাজনীতি করে। এখন তারা প্রভু পাল্টানোর চেষ্টা করছে। এই দলটি এদেশের জনগণের কাছে পরিত্যাক্ত হয়েছে। এখন তারা কার কাছে যাচ্ছে, না যাচ্ছে এ নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ