রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য বদি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরকে সেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত কোনো নোটিশ পাননি জানিয়ে দু’জনই বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছেন, অনুষ্ঠানেই তারা এম জহিরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ঈদ পুনর্মিলনী সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রহমান বদি এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাফর আহমদ। এছাড়াও ছিলেন আরেক সহ-সভাপতি এম জহির হোসেন। সে অনুষ্ঠানে এমপি বদির ‘গুণকীর্তন’ করতে গিয়ে জহির হোসেন বলেন, ‘এমপি বদি এমনই জনপ্রিয় যে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেখ হাসিনাও বিপুল ভোটে পরাজিত হবেন। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, ‘জহিরের বক্তব্যের পর উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর ও এমপি বদি বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু তারা জহিরের বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি। এতে প্রমাণ হয় জহিরের বক্তব্যকে তারা মৌন সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে এমপি বদি ও জাফরের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে শো’কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেটি রোববার ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দু’একদিনের তাদের হাতে পৌঁছাবে চিঠিটি। ’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জহিরের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের পর উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগসহ নানা সংগঠন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা হয়। সভায় ৬৭ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এদের দুই-তৃতীয়াংশই ওই বক্তব্য দেওয়ার দায়ে জহিরকে অব্যাহতি এবং এমপি বদি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরকে শো’কজ নোটিশ দেওয়ার দাবি তোলেন। সেই দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিয়েছে ‘
তবে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, ‘জহির একজন বয়স্ক ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। অতি আবেগের বশে স্লিপিং মিসটেক করে তিনি এমপি বদিকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে জনপ্রিয় বলেছেন। এজন্য আমরা সভা শেষ করেই তাকে ভৎর্সনা জানিয়েছি। কিন্তু একটি মহল এ নিয়ে অপরাজনীতিতে মেতে উঠেছে। তিলকে তাল করার চেষ্টা করেছে। এসব করে কিছুই হবে না, এটা কেন তাদের মাথায় আসছে না সেটা আমার বোধগম্য নয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো শো’কজ নোটিশ পাইনি। যদি তারা দিয়ে থাকে, তবে কী কারণ দর্শাবো, কেন দর্শাবো, তা-ইতো বুঝতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো কিছু দেখার সময় নেই। কোথাকার কোন সলিমুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কী বললো, তা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। কাজেই এটি আমার কাছেও কোনো বিষয় নয়। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বাংলানিউজকে বলেন, ‘জহির যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার নিজস্ব বক্তব্য। কিন্তু তারপরও আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সভা শেষেই তাকে ভৎর্সনা করেছি। ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস বাঙ্গালি ও সোনা আলী বিষয়টি অবগত আছেন। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগ অনেকটাই অগণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করে আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার চালায়। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন কাজ করছেন। ’
এমপি বদি জানান, তিনি এখনো কোনো ধরনের নোটিশ পাননি। তাছাড়া, সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত হয়। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা অবগত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
টিটি/এইচএ/