রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে শনিবার বিকেল ৩টার এ নাগরিক সমাবেশ আহ্বান করেছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। এতে সভাপত্বি করবেন ড. কামাল হোসেন।
গণফোরামের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশের অনুমতি পাওয়া গেছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বানে এই নাগরিক সমাবেশ হবে। এতে যুক্তফ্রন্টের তিন দল, বিএনপি, বামজোট, বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকেই যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫/৬ জন সিনিয়র নেতা সমাবেশে যোগ দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ডা. বি. চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, স্যারের প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, এ সমাবেশে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, বামদলসহ বিরোধী অনেকগুলো দলের নেতা যোগ দেবেন। নেতাদের একমঞ্চে উপস্থিতির মাধ্যমে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। ওই মঞ্চ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের পরবর্তী দফা ও কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।
ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্র-লন্ডন থেকে ফেরার পর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি। বাম গণতান্ত্রিক জোটের আট দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতাদের আরেকটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে কয়েক দফা দাবির বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে যুক্তফ্রন্ট নেতা ডা. বি.চৌধুরীর বাসায় বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সূত্রমতে, সব আলোচনা ও বৈঠকে সরকারের বাইরে থাকা দল ও জোটগুলোর মধ্যে অন্তত পাঁচটি সাধারণ দাবিসহ কয়েকটি লক্ষ্যে মতৈক্য হয়েছে। বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের পাঁচটি মূল দাবি হচ্ছে, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা ও সেনাবাহিনী মোতায়েন। ওইসব দাবি ও লক্ষ্য নিয়েই একমঞ্চে আসছেন সবাই। দল ও জোটগুলোর মধ্যে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন নয়, শাসন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে।
ঐক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে ‘জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের পর চলতি মাসেই সরকারের বাইরে থাকা সব দল ও জোট প্রথমে অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করবে। এরপর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে অভিন্ন ইস্যুতে একই মঞ্চ থেকে কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সূত্রমতে, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সম্মত হয়েছে বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টে থাকা বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং বাম গণতান্ত্রিক ধারার পৃথক চারটি দল। এই ঐক্যে ২০ দলীয় জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামী ছাড়া নিবন্ধিত অন্য দলগুলোও থাকবে। এছাড়া আট দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও একই প্ল্যাটফর্মে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এর বাইরে বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গেও আলোচনা চলছে একসঙ্গে আন্দোলন করার উদ্দেশ্য নিয়ে।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ঐক্য প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বলেছেন। কারান্তরীণ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও এতে সম্মতি রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার হটানোর যেকোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকতে চায় বিএনপি। এজন্য সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
এমএইচ/এমআইএইচ/এএ