ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দ্বিধাবিভক্ত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
দ্বিধাবিভক্ত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি মো. ফজলুর রহমান ও সৈয়দ অসীম। ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের চেয়ে অনেকটাই কম। তবে কয়েকজন প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে কি না, তা আপাতত নিশ্চিত নয়। তবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বেশ কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপি থেকে কয়েকজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, বিএনপি নেতা সৈয়দ অসীম ও ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী লাকী। অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, সৈয়দ অসীম ও ডা. ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী লাকী এলাকায় সক্রিয় থাকলেও বিএনপির অন্য প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।
 
অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান এক সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ফজলুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ  এলাকায় জনপ্রিয় থাকায় এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট পাননি তিনি। এই ক্ষোভে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন। এরপর মো. ফজলুর রহমান ১৯৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। পরে তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান। এরপর তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 
আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আর বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো। হাওরবাসী আমাকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবো।
 
এ আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তরুণ নেতা সৈয়দ অসীম। তিনি আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন।
 
সৈয়দ অসীম বাংলানিউজকে জানান, প্রশ্নবিদ্ধ উপ-নির্বাচনে তাকে পরাজিত করা হলেও তিনি বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটারের ভোট পেয়েছিলেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।
 
তিনিও আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
 
সৈয়দ অসীম আরো জানান, হাওরের তরুণ ভোটাররা তাকে চাচ্ছেন।
 
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করতে পারলে আসনটি উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
 
এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি ও এর বিভিন্ন অংগ সংগঠন।

স্থানীয় বিএনপির একটি অংশের কর্মীদের অভিযোগ, মো. ফজলুর রহমান ১৯৯৬ সালের নির্বাচন থেকেই এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। বারবার পরাজয় এবং দল পরিবর্তন করার কারণে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এছাড়া বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের চেয়ে আওয়ামী লীগ এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেওয়ায়  স্থানীয় নেতাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে।
 
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে  সৈয়দ অসীম যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তখন তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। এরপর থেকে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এতে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
 
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এই আসন পুনরুদ্ধারে বিএনপি হাই কমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার অপক্ষোয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
 
এ ব্যাপারে ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলে আমরা নির্বাচনে যাবো।
 
দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধের ফলে কিছুটা বিভক্তি থাকতে পারে বলেও স্বীকার করেন তিনি।  
উল্লেখ্য, বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। তিনি এই আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনটিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।