রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
জোটের এই ঘোষণা পাঠ করেন সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলেই এত প্রতিকূলতার মাঝেও ২০ দলীয় জোট সর্বসম্মতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও আমাদের নির্বাচনী সমঝোতা হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকারের দুর্নীতি, অনাচার, তিস্তার পানি আনতে ব্যর্থতাসহ রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায় সীমাহীন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সুযোগ জনগণকে দেওয়া উচিত। সে কারণেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। যাতে জনগণ তাদের ক্ষোভ ও বেদনা প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। ’
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, আমরা দাবি করছি, সরকার দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দিয়ে তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে; অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে; অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে; নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের হয়রানি করবে না।
খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, নতুন মামলা না দেওয়া ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও বেশি করে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন পযর্ন্ত কোনো নেতাকর্মীকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
‘এমনকি ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দেওয়া গায়েবি মামলায় হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর সরকারের আইনজীবীরা চেম্বার জজ আদালতে ওই সমস্ত মামলার জামিন বাতিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ’
এ সময় অলি আহমদ অভিযোগ করেন, অনুগত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দিয়ে দেশের সকল বিরোধী দলের আবেদন ও যৌক্তিক পরামর্শ অগ্রাহ্য করে একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এর উদ্দেশ্য- বিরোধীদলগুলোকে নির্বাচনের জন্য সময় কম দেওয়া। কারণ সরকারি দল গত কয়েকমাস ধরে নীতিমালা অমান্য করে নির্বাচনী প্রচারণা করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে প্রকাশ্যে দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে জনসভা করেছেন।
‘সারাদেশে নির্বাচনী প্রতীকসহ তাদের পোস্টার ব্যানার শোভা পেলেও নির্বাচন কমিশন এসবের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। করেনি। এসব থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ তো দূরের কথা বরং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে ইসি। ’
তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের বাহক বলে মনে করে। সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ ও একগুয়েমী মনোভাব দৃশ্যমান। সংসদ বহাল রেখে সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তারা ক্ষমতায় পুনরায় আসীন হতে চায়। তাদের এ ধরনের মনোবাসনা পূর্ণ নাও হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, তফসিল না পেছালে ২০ দলীয় জোট পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।
আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, জোটের নেতারা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এখনও তা চূড়ান্ত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, মুসলিম লীগের সভাপতি এএইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি মো. ওয়াক্কাস, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের একাংশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, ডেমোক্র্যাটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সভাপতি রিটা রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি এমএন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গভীর রাতে আমাকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সকালে আমার এলাকার অনেক লোকজনের সঙ্গে মিটিং থাকায় আসতে পারিনি।
‘তবে আমি জোটে আছি। জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচন করবো,’ বলেন পার্থ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৮/আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা
এমএইচ/এসএইচ