গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বর্জন করে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনকে প্রতিহত করতে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও অনেক আগে থেকেই একটা সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এ নির্বাচনে সব দল আসবে কি-না; নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কি-না; সেটা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির এসব দাবিকে অসাংবিধানিক বলে বারবার নাকচ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন হবে এবং সংবিধানের বাইরে আওয়ামী লীগ যাবে না বলেও দলটি বারবার জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর দুই দফায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপে তাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসবে কি-না, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। তবে রোববার (১১ নভেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। গত নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনেও একটা অস্থিরতা তৈরি হয় কি-না, এমন সংশয় ও আশঙ্কাও দূর হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা স্বস্তির ভাব তৈরি হয়েছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এ প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১১ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক সভায় শেখ হাসিনা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন হবে। আমরা চাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচনে জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই জয়লাভ করবে। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করবো। যেহেতু সবাই নির্বাচন করবে সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা শুভবুদ্ধির উদয় বলে আমি মনে করি। তারা নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বস্তরের মানুষ উৎসাহ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা খুবই ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি। একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ছিলো, সেটা কেটে গেলো। তবে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করবে সরকারের ওপর, মানে আমি বোঝাতে চাইছি প্রশাসনের ওপর। ’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ যে দলগুলো কিছু দিন আগেও নির্বাচনের বিপক্ষে অংশ নিয়েছিলো তাদের নির্বাচনে আসার ঘোষণা ইতিবাচক। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব। ’
অতীতে যারা নির্বাচন বর্জন করে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি চেয়েছিলো, তারা এখন নির্বাচনে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এখন তারা বাস্তবতায় ফিরে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে। ’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব দল নির্বাচনে আসার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। নির্বাচন বর্জন করে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার মধ্য থেকে তারা বেরিয়ে এসেছে এটা রাজনীতি ও নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ’
জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে আসার ঘোষণা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি। এর ফলে একটা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। ’
এদিকে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের শরিক স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নিবন্ধন ইতোমধ্যেই বাতিল হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অংশ নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ফলে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হতে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৮
এসকে/জিপি