বুধবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কাদের এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে এবং (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে হটানোর জন্য বিএনপি নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে এবং নাশকতা চালিয়েছে।
দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশের সঙ্গে। তারা পুলিশের দু’টি গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেয়। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। পরে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন,যান চলাচল যেন স্বাভাবিক থাকে সেজন্য বিএনপি কর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে তারা বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় আমাদের এখানে তাদের চেয়েও বেশি জমায়েত হয়েছিল। এমনো দেখেছেন, মাশরাফিকে (ক্রিকেটার মশরাফি বিন মর্তুজা) দেড় কিলোমিটার হেঁটে এই অফিসে আসতে হয়েছে। সেই তুলনায় এমন কী ভিড় তাদের (বিএনপি) হয়েছে? তারা একেবারে বিনা উসকানিতে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা পরিকল্পিতভাবে নয়াপল্টনে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে নিজেদের বীরত্ব জাহির করলো। পুলিশের দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং পুলিশের ১৩ সদস্যকে মারাত্মকভাবে আহত করে, তারা হাসপাতালে। ’
‘নির্বাচন বানচালের যে ষড়যন্ত্রর আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই কি তারা শুরু করে দিলো? তারা কি জাতিকে জানান দিলেন যে, আমরা ২০০১ সালে যা করেছি, ২০১৪ সালে যা করেছি, আবারও আমরা সেটাই করবো? তাদের দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। নির্বাচনে যাওয়া নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তারা জনপ্রিয় জননন্দিত নির্বাচিত শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। এটাই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। আজকে যারা ঐক্যফ্রন্টের নামে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, আজকে তারা স্বরূপে উন্মোচিত হয়েছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে পল্টনে পুলিশের ওপর সাঁড়াশি হামলার মধ্য দিয়ে। বিএনপি আজ আবার প্রমাণ করলো, তাদের সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা করে, তারা যে একটা সন্ত্রাসী দল, বোমা-সন্ত্রাসের দল, কানাডার আদালত যাদেরকে সন্ত্রাসী দল বলে চিহ্নিত করেছে। ’
‘অন্যায়ভাবে বিএনপি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা চালিয়ে সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে’ বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব, মিথ্যাচারই আপনাদের রাজনীতি। আপনি আবারও মিথ্যাচার করলেন। পুলিশ কেন সরিয়ে দেবে? সেখানে ভিডিও ফুটেজ আছে। একেবারে নীরব দর্শক ছিল পুলিশ। আপনি আবারও মিথ্যাচার করলেন বিএনপির সেই পুরনো নিয়মে। ’
কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ শুনেছেন। তিনি ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আক্রমণের পাল্টা আক্রমণ পুলিশ করেনি, সেজন্য পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার একটা কথা বলতে চাই, নির্বাচন হবে। যত ষড়যন্ত্র হোক, যত চক্রান্তই হোক, যত নাশকতাই করুক, এই নির্বাচনকে বানচাল করতে গেলে, এই নির্বাচনকে বানচালের চক্রান্ত নাশকতা সহিংসতা যদি ঘটে, বাংলাদেশের জনগণই এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করবে। ’
‘এখন আমরা বুঝলাম, তারা ইলেকশনে এসেছে, বোধ হয় ইলেকশন বানচাল করার একটা খেলা হিসাবে এবং এটা একটা তাদের মনে হয় নীলনকশা আছে, সেটা তারা বাস্তবায়ন করতে চায়। আজকে টেস্ট কেস তারা দেখালো। আমরাও এই টেস্ট কেস দেখলাম। কী করতে হবে, জবাব কিভাবে দিতে হবে, আমরা আইন অনুযায়ী নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রস্তুত হবো। ’
দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, একজনকে নৌকার প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় ও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে সঙ্গে সঙ্গেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
এসকে/এইচএ/