ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বয়কট করবো না, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো: ড. কামাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
বয়কট করবো না, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো: ড. কামাল আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

ঢাকা: বিএনপিসহ অন্যান্য শরিকদের উদ্দেশ্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, একবার বয়কট করে ভুল করেছি। আর নির্বাচন বয়কট করা যাবে না। একবার বয়কট করে যে খেসারত দিয়েছি, সেটা যেন জীবনে আর না আসে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকে লড়ে যেতে হবে।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণে আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট।



ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনে ওরা (আওয়ামী লীগ) যত রকম ১০ নম্বরি করার করুক, আমরা ভোট দেব, ভোটে থাকবো। হাজারে হাজারে ভোট দেব। সবাই ভোট কেন্দ্রে থাকবো।

‘আর যারা টাকা পয়সা দিয়ে এলাকায় ভোট করতে চায় তাদের বয়কট করতে হবে। ’ তিনি বলেন, এখন একজন প্রার্থীর মিনিমাম ৫ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। যদি ৫ কোটি টাকা দিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য হতে হয় তাহলে তো গণতন্ত্র শেষ, শেষ হয়ে আছে। তাই আমাদের পরবর্তি নির্বাচনে পাহারা দিতে হবে। যারা টাকার বিনিময় প্রার্থী হচ্ছেন তাদের বলে দেন তোমরা এলাকায় থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, সরকার প্রতিমুহূর্তে সংবিধান লঙ্ঘন করছে। সকাল, দুপুর, রাত সংবিধান লঙ্ঘন করছে। কোথায় লেখা আছে, ঘোষণা দিয়ে এমপি (সংসদ সদস্য) হওয়া যায়। এ সরকারে বেশির ভাগ এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা কথায় কথায় সংবিধান সংবিধান কর। আমার তো মনে হয় তোমরা পড় না। পড়লে দেখতে, সংবিধানের কোথায় লেখা আছে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। তোমরা বলেছিলে একটা পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটা নির্বাচন দেবে, অল্প সময় কি ৫ বছর? তাহলে ডিকশনারিতে নতুন শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এভাবে মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজী। ভাওতাবাজীর জন্য যদি কোন পুরস্কার থাকে সেটা তোমাদের পাওয়া উচিত।

দশম সংসদের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে নির্লজ্জভাবে ৫ বছর কাটিয়ে দিল। এরা চালাল কিভাবে? লজ্জাবোধও নাই। মানুষ হলে তার লজ্জাবোধ থাকে। যাদের মাননীয় মন্ত্রী বলা হয় এরা কারা? উপদেষ্টা করা, এমপি করা? তোমাদের কে বানিয়েছে? এদের কোন ভাবেই মাননীয় বলা যায় না। এর হচ্ছেন এর উল্টাটা। এরা কিসের এমপি কে নির্বাচিত করেছে? আমি তো বলি মেম্বার অব পার্লামেন্ট না ঘোষিত প্রার্থী বা জিপি।

কারো নাম উল্লেখ না করে কামাল হোসেন বলেন, ওখানে আমারও কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে। তোমরা মন্ত্রী, এমপি হয়ে কি হয়ে গেছ? তোমাদের কি লজ্জাবোধ বলে কিছু নেই। কোন রকমের বোধ, সব হারিয়ে তোমরা মানুষ আছ না অন্য কিছু হয়ে গেছ। আদম সন্তান হলে তো লজ্জাবোধ থাকবে। তোমরা কি মানুষ না কি অন্য কিছু হয়ে গেছ। তোমরা কিসের চাকরি নিয়েছ? মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজী করার চাকরি? এরচেয়ে লজ্জাসকর আর কিছু হতে পারে না। একটু লজ্জাবোধ ফিরে আসুক এ দোয়া করি।

তিনি বলেন, তোমরা ক্ষমতায় আছ বলে যা খুশি তাই করবে এটা হতে পারে না। ক্ষমতার বলে যা খুশি তাই করে পার পেয়ে যাবে, কিছুই হবে না। এটা ভুলে যাও, এটা বাংলাদেশ। তোমরা পার পাবে না। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার নাম উল্লেখ না করে বলেন, তখন একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেছিলেন ‘তোকে কে নিয়োগ দিয়েছিল। ’ এ কথা যে বলেছিল তার বিরুদ্ধে কোড অব কনডেমট হতে পারে। এখনো হতে পারে, আপনারা করেন আমি অ্যাপিয়ার দেব। তাহলে বুঝুক যা খুশি তাই বলে পার পাওয়া যায় না, যাবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এটা খুবই ন্যায়সঙ্গত। যিনি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিরোধী দলের প্রধান ছিলেন। এনিয়ে তো বলার কিছু থাকার কথা না। এতোদিন পর একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে। একটা দলের নেত্রী সরকার প্রধান থাকবেন আরেকজন জেলা খানায় থাকবেন এটা একদমই মেনে নেওয়া যায় না। সংলাপে বলা হয়েছিল তফসিল ঘোষণার পর আর গ্রেফতার হবে না। প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত।
 
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের যুক্তিকতা নেই বলে দাবি তুলে কামাল হোসেন বলেন. এতো টাকা খরচ করে কেন ইভিএম মেশিন কেনা হলো। এটা চাপাবেন না। আর যদি চাপাতেই হয় সংলাপে বসুন আপনাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরুন আমরা আমাদের যুক্তি তুলে ধরি। যদি বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে কথা নেই। কেন ব্যবহার করা হবে আমাদের একটু তো বোঝার ক্ষমতা আছে। আশাকরি আমরাও বোঝালে আপনি বুঝবেন।
 
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশানের সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
 
এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও বক্তব্য দেন সমাবেশে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
এসএম/এমএ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।