ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর আপেলের ভারে নৌকাডুবির শঙ্কা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর আপেলের ভারে নৌকাডুবির শঙ্কা! স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন আপেল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ। ডানে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিরিন আখতার।

ফেনী: খালেদা জিয়ার আসনখ্যাত ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-পরশুরাম-ফুলগাজী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক আপেলের ভারে নৌকাডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এ আসনে মহাজোট প্রার্থী জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি শিরীন আখতারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহর (আপেল) পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। মহাজোটের এ বিভক্তিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মজনু।

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করে অন্য প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থনের বিষয়টি তিনি জোটের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানিয়েছেন।  

এদিকে এ আসনের নির্বাচনী মাঠ সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ফেনী-১ আসনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ ও আপেলের দ্বিমুখী লড়াই হবে, সেক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মজনু।

অতীত নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, এ আসনটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার।
  
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু’টি মামলায় দণ্ড থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু। মজনু বলছেন ‘আমি নিজের জন্য ভোট করছি না, জনগণ ভোট দেবে খালেদা জিয়াকে, আমি তার প্রতিনিধি মাত্র’। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন সাধারণ ভোটাররা এবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে।  

এদিকে নৌকার প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেল ৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সভা-সমাবেশ করে জাসদ নেত্রীর বিরোধিতা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু তিনি আবারও মহাজোটের প্রার্থী হওয়ায় এ আসনের তিনটি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তবে প্রথমদিকে নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের একটি অংশ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আপেলের পক্ষে মাঠে সরব হতে থাকেন।  

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে জাসদ নেত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি বলে জানা গেছে।  

এরপর থেকে ধানের শীষের মোকাবিলায় আপেল প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে গণসংযোগ করছেন। ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আপেলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন এবং কেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাসদ নেত্রী শিরীন আখতারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে, তাকে নিয়ে বিএনপির ধানের শীষের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে ফেনী-১ আসনে বারবার নির্বাচিত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ি ফুলগাজীর শ্রীপুরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও হয়রানির মধ্যে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে ধানের শীষের নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। যেখানে গণসংযোগে যাচ্ছেন সেখানেই শত শত নেতাকর্মী ও ভোটারের ঢল নামছে বলে প্রার্থী মজনু জানিয়েছেন।

মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জানান, শিরীন আখতার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে নামতে রাজি নন।

ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুদ্দিন আহম্মদ বুল মজুমদার জানান, শিরীন আখতারকে নিয়ে ফেনী-১ আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বিকল্প প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন।

এদিকে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেসবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, মরে গেলেও দলের সঙ্গে বেইমানি করতে পারবো না। নৌকা প্রতীকের বিজয়ের জন্যই কাজ করে যাবো। কিন্তু শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) ছাগলনাইয়ার বাংলাবাজারে তাকেও দেখা গেছে শেখ আবদুল্লাহ’র একটি নির্বাচনী পথসভায় অংশগ্রহন করতে।

শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতাকর্মীরা নিজেদের বিভেদ দূর করে নৌকা প্রতীককে জয় করবেন, নাকি বিএনপি সে সুযোগে নিজেদের জয় পুনঃরুদ্ধার করবে তা এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮
এসএইচডি/আরআর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।