ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘শেখ হাসিনা ছাড়া আ. লীগে কেউই অপরিহার্য না’

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
‘শেখ হাসিনা ছাড়া আ. লীগে কেউই অপরিহার্য না’

ঢাকা: আওয়ামী লীগে একমাত্র দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউই অপরিহার্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদের ক্ষেত্রে দায়িত্ব শুধু দলেই নয়, একেকজন একেক জায়গায় দায়িত্ব পেয়ে থাকেন বলেও জানান তিনি। 

বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ মন্তব্য করেন।  

সবিচালয়ে নৌমন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে দেওয়া এ সাক্ষাতকারে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের কাজের অগ্রগতি, নতুন জলযান তৈরি, নদী সংস্কারসহ গত এক বছরে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি (কার্যনির্বাহী সংসদ) সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গত ২০ ও ২১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে যে নতুন কমিটি দায়িত্ব পেয়েছে এই কমিটি অনেক ভালো হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কাউন্সলরদের পরামর্শে এবং তাদের দেওয়া দায়িত্ব নিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য আওয়ামী লীগের জন্য একটি ভালো কেন্দ্রীয় কমিটি উপহার দিয়েছেন। এই কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে আরও গতিশীলতা আসবে। ’

সদ্য বিদায়ী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য নতুন কমিটিতে আসতে পারেননি। এর মধ্যে তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন যারা বর্তমান মনন্ত্রিসভার সদস্য। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও এদের এক জন। তিনি বিগত টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।  

এ বিষয়ে প্রতিক্রয়া জানতে চাওয়া হলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে এক এক জন এক এক জায়াগায় দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। যাকে যেখানে দায়িত্ব দেওয়া সে অনুযায়ী সে তার দায়িত্ব পালন করেন। আসলে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউই অপরিহার্য না। তিনি যাকে যেখানে যোগ্য মনে করেন সেখানে দায়িত্ব দেন, সেখানে আমরা কাজ করি। ’

সাক্ষাতকারে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘অনেক প্রকল্প আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি। অনেক প্রকল্পের কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পতেঙ্গা এফবিসিডি সেটা আছে সেটার উন্নয়ন কাজ জুনের মধ্যে শুরু হবে। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর নির্মাণের অনুমোদন আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। পায়রা বন্দরের টেন্ডার হয়ে গেছে। আমাদের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের টেন্ডার হয়ে গেছে। পায়রা বন্দরে ইতোমধ্যে জাহাজ আসা শুরু করে দিয়েছে। পায়রা বন্দরের আউটার ড্রেজিং ২৬ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে। মংলায় ১৫শ’ কোটি টাকার ইকুইপমেন্টের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ পরবর্তী কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া দেশের নদীগুলো দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসকদেরকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নৌপথের আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৩৫টি জলযান (ফেরী) কেনার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। পার্চেস কমিটি ইতোমধ্যে এর অনুমোদন দিয়েছে। টেন্ডার হয়ে গেছে, এটি ওয়ার্ক অর্ডারে চলে গেছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ৩৫টি ড্রেজার কেনার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে এবং টেন্ডারে চলে গেছে। ৫৩টি নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান আছে। এর বাইরেও পুনর্ভবা, ধরলা নদী খনন কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে। মন্ত্রণালয়ের কাজের গতিশীলতা এসেছে, অনেক বেশি। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর হবে। ‘মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে গেছে। এটি পরিকল্পনা কমিশনে চলে গেছে। ২০২৪ সালে এই বন্দর বাস্তায়নের কাজ শেষ হবে। ৯০ মিটার গভীর এই বন্দর নির্মাণ হলে ১৯ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) বন্দরে ভিড়তে পারবে। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে ওঠবে। যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।  এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বন্দরটি বিশাল ভূমিকা রাখবে।

ঈদসহ বড় উৎসবের সময় নৌপারাপারে মানুষের দুর্ভোগ দুরতে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাওয়া হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে পরিমাণ ঘন বসতিপূর্ণ দেশ সেই তুলনায় অবকাঠামোগুলো গড়ে ওঠেনি। এটার জন্য বর্তমান সরকার দায়ী না। ৩০ বছর আগে যেটা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিলো নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে সেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। বুড়িগঙ্গার যে অচলায়তন দূর করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটা যদি ৩০ বছর আগে নেওয়া হতো তাহলে এই অবস্থা হতো না। ৩০ বছর আগে যদি আমরা গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা চিন্তা করতাম তাহলে আজ আমাদের পিছিয়ে থাকতে হতো না। সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা ৩৫টি জলযান (ফেরী) তৈরি করছি। সদর ঘাটের কর্মপরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা এই ঘাট সম্প্রসারণ করছি। আরিচা-নগরবাড়ি, পাটুরিয়া দৌলতদিয়া রুটের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বর্ষ মৌসুমে নদীর গতিপথ স্টাডি করে আমরা নতুনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। তছাড়া ৩৫ জলযান চলে এলে এই সংকটগুলো কমে আসবে। ফেরী ঘাটে যে জটটা তৈরি হয় সেটা শুধু ফেরীর জন্য না, এটা অনেকাংশে আমাদের বাংলাদেশের যে সড়কগুলো, সড়কের যে অবস্থা সেটা থেকে অনেক সময় যানজট তৈরি হয়। সড়কে যদি ৫/৬ কিলোমিটার যানজট বেধে থাকে সেটার জন্য তো আর ফেরী দায়ী না। দেখ যায় ১২ কিলোমিটার যানজট, বলা হয় ফেরী সংকট। অথচ এমনও চিত্র আমরা দেখিছি, মিডিয়াতে ছবি এসেছে ফেরী ফাঁকা যাচ্ছে। তারপরও এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে গত দুইটি ঈদে মানুষগুলোর জন্য আমরা যে ব্যবস্থা করতে পারছি সেটাতে আমরা পুরোপুরি পরিতৃপ্ত না হই কিন্তু আমরা অসন্তুষ্ট না। ইতোমধ্যে আর কিছু রো রো ফেরী যুক্ত হয়ে যাবে। যত দিন যাবে সমস্যাগুলো সমাধান হবে এবং সহজ হবে সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি।

বাংলপাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।