ঢাকা: বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অংগ সংগঠনটির নাম জাতীয়তাবাদী কৃষকদল। দীর্ঘ ২২ বছর পর দলটির কাউন্সিল হলেও দুই মাসেও হয়নি কমিটি।
জানা গেছে, দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ১২ মার্চ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষমতা প্রদান করেন। ফলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা আসবে লন্ডন থেকে। তাই নেতারা সবাই সেদিকেই তাকিয়ে আছেন। কৃষক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
কাউন্সিল হওয়ার দুই মাসেও কমিটি কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক দলের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, সদস্য সচিব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে মিস ইনফরমেশন দেওয়ার কারণে কমিটি হচ্ছে না। কর্মীদের কাছে মিস ইনফরমেশন দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের খবরকে মিসলিড করে মহাসচিবকে মিস ইনফরমেশন দিয়ে কনভেন্স করে উনি প্রথম অধিবেশনে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ভাঙিয়ে দিয়েছেন। প্রস্তুতি কমিটি ভেঙেছে ভালো কিন্তু তাদেরতো ভোটের অধিকার বঞ্চিত করা যাবে না।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে বিভিন্ন রকমের কমিটি পৌঁছেছে দাবি করে তিনি বলেন, কমিটি তো উনি করে দেবেন। কিন্তু প্রোপোজাল তিন/চার রকমের গেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে। এর পরপরই তিনি আবার বলেন, ভুল হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো কমিটি যায়নি। উনার কাছে বিভিন্ন নাম গেছে। নির্দিষ্ট কোনো কমিটি উনি চাননি।
এখন কেন কমিটি হচ্ছে না জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, কমিটি হচ্ছে না কারণ একটা হলো গণ্ডগোল হয়েছিল, তুহিনকে (বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব) রাখবে কি রাখবে না এ নিয়ে। আর লকডাউন চলছে ম্যাডাম হসপিটালে। আমার ধারণা এই তিন কারণে এখন দেরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আমাদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ছিল তার মধ্যে হয়তো দুই/একজন তার পক্ষে (তুহিনের) থাকতে পারে। ১৩০/৩৫ জনই তার বিপক্ষে। তিনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদেরই প্রার্থী।
সভাপতি-সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী কে কে আছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখন সভাপতি পদে দুজনের নাম আছে। শামসুজ্জামান দুদু (বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি) ও সাবেক এমপি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম। এছাড়া বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিনও সভাপতি প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক পদে ৩/৪ জন আছেন। এর মধ্যে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব কৃষিদিব হাসান জাফির তুহিন, সাবেক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম ও দল থেকে বহিষ্কার হওয়া পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া (সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক) শাহজাহান মিয়া সম্রাট। এছাড়া সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান মিলনও সাধারণ সম্পাদক হতে চান।
জানা গেছে, যেহেতু কমিটি হতে আর ভোট হবে না। সে কারণে এখন কমিটি করার পেছনে মূল ভূমিকা থাকবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। তাকে সহায়তা করবেন, বিএনপির মহাসচিব ও কৃষক দলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক দলের আহবায়ক কমিটির তদারকির দায়িত্বে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
জানতে চাইলে সদস্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি, দেশে লকডাউন চলছে তারপরে বিএনপি নোটিশ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে। ম্যাডাম সুস্থ হলে আর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে হয়তো কমিটি দিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, কাউন্সিলের দিন সব কাউন্সিলর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে। ওখানেইতো ভোট হয়ে গেছে। উনি যে কমিটি দেবেন সেটাই হবে।
প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি পদে কারা আসতে পারেন, জানতে চাইলে তুহিন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। অনেকেই আছেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব যা করবেন সেটাই আমরা মেনে নেব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সভাপতি করে কৃষক দলের প্রথম কমিটি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুজ্জামান দুদুকে।
১৯৯৮ সালে মাহবুব আলম তারাকে সভাপতি ও দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি হয়। এরপর ২০০১ সালে মাহবুব আলম তারা কৃষক দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মজিবুর রহমান মোল্লা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন।
২০০৭ সালে তার মৃত্যুর পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আসেন বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব হওয়ার পর কৃষক দলের দায়িত্ব ছাড়েন। তারপর থেকে সভাপতির পদটি ছিলো শূন্য। পাঁচ বছর ওইভাবে চলার পর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালের ১৬ মে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক দলের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। এর দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ১২ মার্চ সম্মেলন হলেও ঝুলে আছে কমিটি।
দুদু-তুহিনের পাল্লা ভারী
২২ বছর পর কাউন্সিল হলেও পুরনো নেতৃত্বই নতুন করে আসতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০ বছর সাধারণ সম্পাদক ও দুই বছর আহবায়ক থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুই পরবর্তী কমিটির সভাপতি হবেন এমনটি আভাস পাওয়া গেছে। আর দুই বছর আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডন থেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে চূড়ান্ত। আর সেজন্য লন্ডনের দিকেই তাকিয়ে আছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
এমএইচ/এজে