ঢাকা: বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রায় ২৭ বছর পর অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় ওই কাউন্সিলে সরাসরি ভোট হয়।
ভোটে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হন। এর তিন মাস পর ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন সভাপতি ও সম্পাদক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিগগিরই ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও সেই কমিটি আর দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজ চলছে। বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন ও করোনার কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন হয়। ওই কমিটিতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী অনেক ত্যাগীদের স্থান হয়নি। সে কারণে সভাপতি তাদেরকে আশ্বস্ত করেন শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। ত্যাগিরা সেখানে স্থান পাবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় ত্যাগীরা হতাশা প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের ব্যানারে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা, বিক্ষোভ, অবস্থানসহ নানা আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও করোনার অজুহাতে এখনও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সংসদের সুপারভাইজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বঞ্চিতদের সঙ্গে এক মিটিংয়ে দ্রূত সময়ের মধ্যে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে আরেকটা আংশিক কমিটি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারি করোনার আগে কমিটি দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর জুলাইয়ের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তখন দফায় দফায় প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি বঞ্চিতদেরকে কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জানুয়ারির আগে কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদ ২০ মাস পার হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় সংসদের আংশিক কমিটি বর্ধিত বা পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।
পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, দুই বছর মেয়াদী কেন্দ্রীয় কমিটির সময় আছে আর মাত্র চার মাস। কিন্তু তারা এখনও কমিটিই করতে পারেনি। এর আগের কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোও এভাবে সময় ক্ষেপণ করে অবৈধভাবে বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকেছে। ফলে তৈরি হয়নি নেতৃত্ব। কেউ কেউ কমিটিতে স্থান না পেয়ে ছাত্রদল ছেড়েছেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হলেও তারা একই পথে হাঁটছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আংশিক কমিটি নিয়েই তারা মেয়াদ শেষ করবেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন অজুহাতে সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকবেন।
জানতে চাইলে বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রের অধীনে অনেকগুলো কলেজ আছে সেগুলো এখনও কমিটি হয়নি। ওই সব কলেজ কমিটিতে যারা বাদ পড়বে তারা কেন্দ্রে চলে যাবে। কলেজের কমিটিগুলো না দিতে পারায় কেন্দ্রীয় কমিটি দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। কারণ কলেজের আগে যদি কেন্দ্রের কমিটি হয়ে যায়, তাহলে যারা বাদ পড়বে তারা আর পদ পাবে না।
যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় জেলা মর্যাদা ও উপজেলা মর্যাদার যেসব কলেজ রয়েছে এগুলোর কমিটি করার জন্য টিম করা হয়েছিল। ওই টিমের সদস্য হিসেবে আমি জানি যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলতে পারবেন। তারা কেন এখনও কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন না তা জানি না।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে এসব কমিটি অনুমোদনের জন্য কয়েকটি সভা হয়েছে। আশা করছি ঈদের পরে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২১
এমএইচ/এএটি