ঢাকা: আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমেই দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দলীয় সর্তক অবস্থান থাকলেও অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না।
প্রতারক সাহেদের ঘটনা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠার এক বছরের মাথায় আবার সমালোচনার ঝড় চলছে আওয়ামী লীগের আরেক উপকমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। দলে অনুপ্রবেশ রোধে সতর্কতার মধ্যেই ঢুকে পড়া এই হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বিভিন্ন অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কারের পর র্যাবের অভিযানে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। এর পর বেরিয়ে আসছে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।
গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে এবং এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত। এই অনুপ্রবেশের কারণ কি সেটাও দলের নেতাদের কাছে চিহ্নিত এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দল থেকে বার বার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দল ক্ষমতায় থাকার কারণে সুবিধাবাদীরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে অনুপ্রবেশ করছে। সুবিধাবাদীরা যাতে দলে ঢুকতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে দীর্ঘ দিন ধরেই বার বার সতর্ক করে আসছেন। তার পরও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে এবং একের পর এক অঘটনের জন্ম হচ্ছে যার দায় সরকার এবং আওয়ামী লীগের ওপর এসে পড়ছে।
অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আওয়ামী লীগে সতর্কতা অব্যাহত থাকার মধ্যেই চলতি বছরই দলের কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি কমিটিতে সদস্য হন আলোচিত ব্যক্তি হেলেনা জাহাঙ্গীর। এর আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বা কোনো কমিটিতে তার নাম শোনা যায়নি। গত জানুয়ারিতে ঘোষিত আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে আকস্মিকভাবেই তাকে সদস্য করা হয়। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরেই তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করা হয় তাকে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দলের এই উপকমিটিতে তার সদস্য করার ব্যাপারে দলের ভেতরের প্রভাবশালীদের সুপারিশ ছিলো। এর আগে গত বছর ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো প্রতারণা ও স্বাস্থ্যখাতের বিশাল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমকে নিয়ে। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। শাহেদের আগে আলোচনার ঝড় তুলেছিলো যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামিমা নুর পাপিয়া। তাকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরা সবাই এখন জেলে। এদেরকে দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে। তবে সতর্কতার মধ্যেও কিভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে তা নিয়েও দলে প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা উদ্দেশ্য নিয়ে দলে আসে বা অনুপ্রবেশ করে তারা দলের ছোট খাটো কোনো নেতার মাধ্যমে আসে না, অধিক ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী কারো না কারো মাধ্যমেই আসে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ, বিভিন্ন অংক কাজ করে। আবার কখনও কখনও দলে হঠাৎ করে কোনো ব্যক্তির এ ধরনের সম্পৃক্ত হওয়ার সময় কোনো কোনো নেতার কাছে অনুপ্রবেশ বলে সন্দেহ হলেও তারা সাহস করে কিছু বলতে পারেন না। যে ব্যক্তিকে দলে ঢোকানো বা পদ দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে দলের কোন প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগ রয়েছে, কোন প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে আসছেন সেটা সহজেই বোঝা যায় না। এ অবস্থায় কিছু বলতে গিয়ে নিজেকে আবার কার রোষানলে পড়তে হয় সে আতঙ্ক কাজ করে অনেকের মধ্যে। তাই এই ধরণের অনুপ্রেবশ ঠেকানো বা এই সমস্যা সমাধান সহজে সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আকস্মিকভাবে কেউ দলের পদ পেয়ে যাওয়া বা দলে ঢুকে পড়া সাধারণ ঘটনা নয়। উপকমিটি বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে পদ পাওয়া হালকা বিষয় নয় যে দলের কেউ ইচ্ছা করেই দিয়ে দিতে পারে। দলের প্রভাবশালী কোনো নেতার মাধ্যম ছাড়া এটা সম্ভব নয় এবং সেটাই হচ্ছে। যার ফলে বার বারই আমরা এ ধরণের ঘটনা দেখছি।
দল এতো সর্তর্ক অবস্থান নেওয়ার পর এ ধরনের ব্যক্তিদের দলে অনুপ্রবেশ দুঃখজনক বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ধানের মধ্যে চিটা থাকেই। আওয়ামী লীগ এত বড় একটা সংগঠন, খড়কুটো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভেসে আসে। তবে এটা দুঃখজনক যে এতো সতর্ক থাকা, সবাইকে বার বার সতর্ক করার পরও কিভাবে ধান্ধাবাজ, মতলববাজরা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সতর্ক থাকা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২১
এসকে