ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়া অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে ‘লকডাউন’ শিথিল ও ১৯ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
শনিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বক্তব্য তুলে ধরেন।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। করোনা সংক্রমণের এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস না পাওয়ার পরেও এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশে সংক্রমণ বাড়ার আরও বেশি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাবার ও নগদ টাকা পৌঁছানো সব চেয়ে জরুরি ছিল। এতে সরকার কর্ণপাত করেনি। সেই কারণেই অপরিকল্পিত ‘লকডাউন’ ফলপ্রসূ হয়নি।
‘অন্যদিকে টিকা সংগ্রহ সংরক্ষণ ও বিতরণের কোনো বিজ্ঞান সম্মত বাস্তব সম্মত ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্ত দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছে। বিএনপি মনে করে টিকা নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না। অপরাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে একদিকে জনগণকে প্রতারণা করছে অন্যদিকে জনগণকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। ’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে ২ ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৫২ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। আজ পর্যন্ত সরকার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নিয়ে এ প্রতারণা অপরাধের সামিল। জনগণের জীবন বিপন্ন করার সব দায় এ সরকারকেই বহন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশে কর্মরত ও দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রবাসী চাকরি হারিয়েছে। অনেকে বিদেশে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। সভায় অবিলম্বে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।
‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক টেলিটক লাইফ সাপোর্টে আছে’ পরিকল্পনা মন্ত্রীর এ মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ বিএনপির মহাসচিব বলেন, বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলো যখন মুনাফা করছে সেই সময় টেলিটক সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে এবং সেই লোকসানি প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা সরকারের অযোগ্যতা ও দুর্নীতির চিত্রই তুলে ধরে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি দলের কোনো ব্যক্তির মালিকানায় দেওয়ার চক্রান্ত কিনা সেই প্রশ্ন জনগণের সামনে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে গুম হওয়া ৩৪ ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়াকিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স কর্তৃক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভা মনে করে এ চিঠি দেওয়ায় গুমের বিষয়ে বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সভায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে জড়িত করার হীন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইতিহাসকে বিকৃত ও নিকৃষ্ট মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এ ধরনের অপপ্রচার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার একটা অপচেষ্টা মাত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
এমএইচ/আরবি