ঢাকা: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। এ দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
উত্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান। আর দক্ষিণের দায়িত্ব পেয়েছেন চেয়ারপারসনের অপর উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। যিনি এর আগে অভিবক্ত ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অতীতে বিএনপির ডাকা সরকারবিরোধী আন্দোলন সারা দেশে সংগঠিত হলেও ঢাকা মহানগর বিএনপির ব্যর্থতার কারণে কোনো সফলতা আসেনি। ওই সময় মহানগর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হলে তারাও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব। এ জন্য আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে তাতে সফল হওয়ার জন্যই মূলত মহানগর কমিটিতে নতুন মুখ আনা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে রোডম্যাপ। সে অনুযায়ী কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মহানগর নেতারা।
জানা গেছে, নতুন কমিটিতে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতীতের মতো কর্মসূচি ডেকে ঘরে বসে থাকবেন না। এবারের আন্দোলনে সব পর্যায়ের নেতাদের রাজপথে দেখা যাবে। তাদের কথার ওপর বিশ্বাস রেখে সুদূর লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহানগরে নতুন কমিটি দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নতুন দায়িত্ব পেয়ে মহানগরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ। দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ১৭ আগস্ট দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানো হয়। তবে সেই কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে ঘরোয়াভাবে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন মহানগরের নতুন নেতারা। দুই মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করা হয়েছে। নতুন করে দায়িত্ব দেওয়ার কাজ চলছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ত্যাগী ও রাজপথে থাকার মতো নেতাদের হাতে নতুন করে ওয়ার্ড ও থানা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে দুই মহানগরের নেতারা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী এই রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
সে অনুযায়ী মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি নতুন করে গঠন করা হবে। সংগঠনকে গতিশীল ও আন্দোলন বেগবান করতে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে। আন্দোলনে মামলার শিকার নেতাকর্মীদের সহায়তা দিতে আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হবে। আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা সহায়তা সেল গঠন করা হবে। সকল স্তরের কমিটিতে শতকরা ১৫ ভাগ নারী নেতৃত্ব ও এক নেতার এক পদ নিশ্চিত করা হবে। এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে ঢাকা মহানগর উত্তরকে আট সাংগঠনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে।
এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভবিষ্যত কর্মপন্থা ঠিক করতে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে দুই দফায় ছয় দিনের সিরিজ বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন তিনি। ওই সিরিজ বৈঠকে তৃণমূল নেতারা দলের হাইকমান্ডকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না, একই সঙ্গে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের আগে মূল বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে হবে। তৃণমূলের এসব পরামর্শের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির নেতাদের পরামর্শ যোগ করেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নির্দেশেই সব পর্যায়ের কমিটি গঠন চলছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বাংলানিউজকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী আমরা সংগঠনকে ওয়ার্ড থেকে মহানগর পর্যন্ত ঢেলে সাজাবো। মানুষের হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের লক্ষ্যে ’৯০-এর চেতনায় গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। এর মধ্যে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ইনশাল্লাহ সফল হবো। ইতোমধ্যে আমরা সে ধরনের রোডম্যাপ তৈরি করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ