ঢাকা: বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তা জানতে চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেনজীর আহমেদ ও র্যাব প্রধানের বিরুদ্ধে। একজন বলেছেন, এটা চমক। আমি এটাকে চমক মনে করি না। আমি এটাকে মনে করি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এটাই তাদের পরিণতি এই জন্য যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়, জনগণকে হত্যা করে তাদের এই পরিণতিতে পড়তে হয়। গতকাল (শুক্রবার) যে গণতন্ত্রের সম্মেলন হয়েছে, সেই সম্মেলনে বাংলাদেশকে ডাকা হয়নি। এখন আমার প্রশ্ন, আমরা দেখতে চাই, জানতে চাই—এই সরকার এই সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা এতদিন ধরে বলে আসছি যে, মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে, পুলিশকে ব্যবহার করছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। ব্যবহার করে মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করছে—এটা এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে রাখা উচিত তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তা। তারা কোনো ব্যক্তি বা দলের কর্মচারী-কর্মকর্তা নন। সুতরাং সংবিধানে আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া আছে তার বাইরে গিয়ে কোনো দায়িত্ব পালন করা আপনাদের উচিত নয়। একদিন না একদিন সেই পরিণতি আপনাদের বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জানি কারা লুট করে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দিচ্ছে। কারা বেগমপাড়ায় বাড়ি তৈরি করেছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে, এটা আমরা সবাই জানি, দেশের সবাই জানে। পরিণতি এটাই। দেখবেন সেই সম্পদও আপনারা ভোগ করতে পারছেন না। আজকে বলা হয়েছে যে, সম্পদ সব বাজেয়াপ্ত করা হবে। কী লজ্জা, আমাদের পুলিশ প্রধান, আমাদের র্যাব প্রধানকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে!
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমি বলতে চাই—দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একা নন, সমগ্র জাতি তার সঙ্গে আছে। তিনি হচ্ছেন সেই প্রতীক, যে প্রতীক আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। সুতরাং বিপদটা শুধু খালেদা জিয়ার নয়। এ বিপদ শুধু বিএনপির একার নয়, এ বিপদ সমগ্র জাতির। কারণ তিনিই একমাত্র যিনি এ দেশকে রক্ষা করতে পারেন। আমি আশা করবো ছোটখাটো সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে, সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হবে। কে কোথায়, বাম-ডান এসব দেখার দরকার নেই। গোটা জাতি তো আজকে ডুবছে। একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, জাগপার একাংশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ