ঢাকা: স্বাধীনতা বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত রাজধানীতে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এ শোভাযাত্রায় জনতার ঢল নামে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ২টায় আওয়ামী লীগের এ শোভাযাত্রার কার্যক্রম শুরু হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে রাস্তায় খোলা ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে শোভাযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়। এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক আমির হোসেন আমু।
সমাবেশ শেষে বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ইতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়। সুসজ্জিত ও বর্ণাঢ্য এ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার আগে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন। তারা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির চূড়ান্ত পতন ঘটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নেতারা শেখ হাসনিার নেতৃত্বে দেশে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিজয় শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, পাড়া, মহল্লা ও এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী, সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে আসতে থাকে। দুপুর দেড়টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এলাকার সব সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে।
রাজধানীর মৎস্য ভবন, শাহবাগ, হাইকোর্ট, কাকরাইল, বাংলামটর, দোয়েল চত্বর, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের সড়ক জনস্রোতে পরিণত হয়। গত ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সমাবেশের পর এই সময়ে মধ্যে এটাই ছিল বড় ধরনের গণমজায়েত। যার ফলে এ বিজয় শোভাযাত্রায় জনতার ঢল নামে। শোভাযাত্রা শুরুর আগেই জনতার স্রোত হাইকোর্ট থেকে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট পেরিয়ে ধানমন্ডি অভিমুখে মিরপুর রোডে গিয়ে পৌঁছায়।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আয়োজিত এই শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজস্ব জমায়েত নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় বিশাল বিশাল জাতীয় পতাকা শোভা পায়। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত হয়ে আসেন। অনেকে সুসজ্জিত ট্রাকে, ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
এ সময় সাউন্ড বক্সে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের গান বাজতে থাকে। এ শোভাযাত্রায় দুইটি হাতিও নিয়ে আসা হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিকেল ৩টায় শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন আমির হোসেন আমু। এ শোভাযাত্রা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে পৌঁছানোর পরও মৎস্য ভবন এলাকা থেকে শোভাযাত্রার অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা সামনের দিকে আগাতে থাকে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিল, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতাকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে তার কন্যা শেখ হাসনিার নেতৃত্বে সেই স্বাধীনতা উদযাপন করতে পারছি। আজ তারই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেছে একটি সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।
এ সমাবেেশ আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড. হাছান মাহুমদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমেদ হোসেন, বিএম মোজ্জাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, মৃনাল কান্তি দাস, আবু আহমেদ মন্নাফী, শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২১
এসকে/কেএআর