ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইউপি নির্বাচন

বোয়ালমারীতে যে কারণে নৌকার ভরাডুবি

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
বোয়ালমারীতে যে কারণে নৌকার ভরাডুবি

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের ভোটও পায়নি নৌকা। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির কেন্দ্রে তার পরিবারের সদস্যদেরও ভোট পায়নি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।

কোনো কোনো কেন্দ্রে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদেরও ভোট পড়েনি নৌকায়। কোনো কোনো কেন্দ্রের আওয়ামী লীগের ভোট দুই অঙ্ক স্পর্শ করেনি। অথচ প্রতিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য সংখ্যা ৪১ অথবা ৫১ জন।  

জানা গেছে, বোয়ালমারীর চতুল ইউনিয়নে চতুল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশার পেয়েছেন মাত্র ৫ ভোট। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মলয় কুমার বোস ওই কেন্দ্রে ভোট দেন। তার পরিবারে ভোটার সংখ্যা ছয়জন। অথচ ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে পাঁচটি।  

একই ইউনিয়নের শুকদেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম খান। ওই কেন্দ্রে নৌকা ভোট পেয়েছে ১২টি। একই অবস্থা বকুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এই কেন্দ্রে নৌকায় ভোট পড়েছে ১০টি। কেন্দ্রটিতে উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল সিকদার এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু ভোট দেন।

দাদপুর ইউনিয়নে রাঙ্গামুলারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ভোট পেয়েছে ৯টি।  

বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর ইসলামী মিশন ও ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা মার্কার প্রার্থী ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ ভোট।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মলয় কুমার বোস বাংলানিউজকে বলেন, ওই ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক দিনের জন্যও নির্বাচনী ক্যাম্পে আসেননি। নৌকার প্রার্থীর কাছ থেকে খরচ নিয়েছেন কিন্তু কাজ করেছেন চশমার জন্য। আর আমার পরিবারের এক সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।

শুকদেবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১২ ভোট পাওয়ার ব্যাপারে চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল খান বলেন, বিএনপির কর্মীদের দিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের নির্যাতন করেছেন  ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।  

তিনি আরও বলেন, একজন ১০ কেজি বোঝা বহন করতে পারা লোককে ১০০ কেজি চাপিয়ে দিলে যা হবার তাই হয়েছে।  

আরও পড়ুন >> বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গায় ফের নৌকার ভরাডুবি

এ ব্যাপারে চতুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী খন্দকার আবুল বাশার বলেন, আমাকে নৌকা দিয়ে মূল্যায়ন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আমি বিজয়ী হতে পারিনি। আমি এর আগে দু’বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে একবার ১৪শ, আরেকবার ১৯শ ভোট পেয়েছিলাম। অথচ এবার নৌকা নিয়ে ৭শ ভোট পেলাম। এটা আমার জন্য দুর্ভাগ্য।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীকুল মীরদাহ বলেন, আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠালেও এলাকায় কোন প্রার্থীর কেমন অবস্থান, তা জানিয়েছি। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের সেসব বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি। প্রার্থীরা দুর্বল ছিলেন। অনেক প্রার্থীকে মনোনয়ন পাওয়ার পর মাঠে নামতে দেখা গেছে। অথচ সম্ভাব্য চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দুই-তিন বছর ধরে এলাকায় নিজেদের ভিত পোক্ত করে নিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য এবং আমাদের ব্যর্থতা।

দলের প্রার্থীর হেরে যাওয়ার বিষয়ে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী) আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাস্তবতা হলো, নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে কাজ করেনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলাদলি ও নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কাজ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। একইসঙ্গে এলাকার রাজনৈতিক মেরুকরণ ও গোষ্ঠীস্বার্থও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে প্রার্থীদের হারার প্রশ্নই উঠত না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।