ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

শ্রীলঙ্কা নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে: জি এম কাদের 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২২
শ্রীলঙ্কা নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে: জি এম কাদের 

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, সারা বিশ্বই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। শ্রীলঙ্কা নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে, আমি মনে করি যে বিষয়টি সরকার যেভাবে দেখছে, আরও বেশি গভীরভাবে দেখা প্রয়োজন।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের আয়ের সংখ্যা অনেক কম।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণের নব-নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে জাপা চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে, আমি মনে করি যে বিষয়টি সরকার যেভাবে দেখছে, আরও বেশি গভীরভাবে দেখা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের আয়ের সংখ্যা অনেক কম।

জি এম কাদের বলেন, আমাদের আয় কখনোই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতো না। এ যে ৪০০ বিলিয়ন ডলার আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে, এটা কিন্তু আমাদের রিজার্ভ থেকে আস্তে আস্তে চলে যাবে। সামনের দিকে আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আসতে পারে।  

তিনি বলেন, আমরা অনেক বড় ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়েছি। মেগা প্রজেক্টের নামে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণ করেছি। অনেক সময় অনেক বেশি সুদে ঋণ নিয়েছি আমরা।  

অর্থনীতিবীদের বরাত দিয়ে জি এম কাদের বলেন, গত অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে সাড়ে এগার লাখ কোটি টাকার মতো বর্তমান সরকারের এখন ঋণ রয়েছে। এ বছরও দেশি-বিদেশি এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আমরা যদি সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি এবং এ খরচগুলো যখন আমাদের করতে হবে তখন বাংলাদেশের দেউলিয়া হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মেগা প্রজেক্ট করে, লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ করে, সেই ঋণের টাকা দিয়ে পোলাও খাওয়া দরকার ছিল না। আমাদের দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। যাতে আমরা সঠিকভাবে চলতে পারি।

মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসঙ্গে পাঁচটা দশটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার দরকার ছিল না। আমরা আস্তে আস্তে একটা একটা করে করতে পারতাম। যাতে করে আমরা সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারতাম। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে বাংলাদেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে দেশের নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম সংকটে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা।  

তিনি বলেন, এমনিতেই জনজীবন দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে একটি খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আমি সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে রেশনিং সিস্টেম চালুর কথা বলেছিলাম। যা অতীতে দীর্ঘদিন আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল। প্রচলিত থাকা সেই সিস্টেমটি আমাদের দেশে আবার পুনর্জীবিত করা উচিত। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় এ সিস্টেমটি এখনও প্রচলিত আছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময় গ্রামে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত তিন ভাগে ভাগ করে সরকারকে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এভাবে প্রতিটি মহল্লায় ডিলারের মাধ্যমে যদি আমরা খাদ্যদ্রব্য সহায়তা করতে না পারি, বাংলাদেশ যেমন দেউলিয়া হতে পারে আবার দেশের মানুষও দুর্ভিক্ষ অবস্থায় পড়তে পারে। তিনি সরকারকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করছেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচিতি অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিল পরিচালনা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এসএমএকে/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।