ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক কল্যাণ পার্টি বিএনপির নেতৃত্বেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এর আগে, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কল্যাণ পার্টির ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় এ বৈঠকটি শুরু হয়ে ৫টায় শেষ হয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের জন্য কাজ করছে বিএনপি। আজকে দলের ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে নির্বাসিত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠন করে সেই সংসদের মাধ্যমে একটি সরকার গঠন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা হবে। পরবর্তীতে আলোচনার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে।
বৈঠকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে যেসব সংস্কার দরকার, সে সংস্কারগুলো মতৈক্যের ভিত্তিতে আমরা গ্রহণ করবো।
এই সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কল্যাণ পার্টি একমত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
এরপর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপি মতবিনিময় শুরু করেছে। তবে যারা ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিলেন না, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় আর যারা জোটে ছিলেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ক্ষেত্রে কাঠামোগত কিছুটা পার্থক্য হবেই। আমরা ১০টি বছর একসঙ্গে চলছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বিএনপির অনুকূলে আন্দোলনে ও বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় থাকতে।
তিনি বলেন, আজকেও আমরা বিএনপিকে প্রস্তাব দিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব যেমনটি বলেছেন; আমরা একমত হয়েছি। বর্তমান সরকারকে সরানো--এটা রাজনীতিতে প্রধান অগ্রাধিকার। এটা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। কল্যাণ পার্টি প্রস্তাবে বলেছে, যদি ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা সম্ভব না হয়, যেকোনো কারণে, তাহলে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে প্রস্তুত। এটাও বলেছি, জোটকে সক্রিয় করার কাজে অথবা জোটের মধ্যে আরও দলগুলোকে একত্রিত করতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আন্দোলনে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে একটি কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবাহিম বলেন, আন্দোলন শুরু হলে আরও মতবিনিময় হবে। জরুরিভিত্তিতে মতবিনিময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়া যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়, সেজন্য একটি কাঠামো তৈরি করা। আন্দোলন তড়িৎগতিতে হয়, আন্দোলনে ১২ ঘণ্টা, চয় ঘণ্টা অনেক দীর্ঘ সময়।
এ প্রসঙ্গে ইবরাহিম বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি মেকাপ করতে হলে আমাদের নিশ্চয়ই অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও সীমাবদ্ধতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাত হাজার মাইল দূরে রাখা হয়েছে। অতএব, এ দুটো সীমাবদ্ধতাকে মেনে আমাদের আগাতে হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, আগামী নির্বাচনে নতুন সংসদ যখন হবে, আগে থেকেই জনগণের কাছে আমরা ওয়াদাবদ্ধ থাকবো-- সংবিধান সংস্কার করতে হবে, প্রয়োজনীয় আরও সংস্কার করতে হবে।
সৈয়দ ইবরাহিমের পরামর্শ, আন্দোলনের পরবর্তীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে। তারমধ্যে মেধাবী তরুণদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেন তিনি।
কল্যাণ পার্টি প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফোরকান ইবরাহিম, মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির পিন্টু, ভাইস-চেয়ারম্যান আলী হোসাইন ফরায়েজী, সভাপতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মাহমুদ খান, যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্লা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মেহেদী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইবরাহিম খান সাদাত, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদ আবেদিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস