ঢাকা: পদ্মা সেতুকে একবিংশ শতাব্দির মাইলফল অর্জন হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবমুখর করতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চলতি মাসের ২৫ তারিখে উদ্বোধন হবে দেশের প্রধান নদী পদ্মার ওপর নির্মিত বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত সেতু। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারসহ জাতীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমালোচনা বাধা অতিক্রম করে নিজস্ব অর্থে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর মতো এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সক্ষমতার বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
এই পদ্মাসেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারা দেশে একযোগে সম্প্রচার করা হবে। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলুন উড়াবেন তখন সারা দেশে প্রজেক্টরের সামনে থেকে সারা দেশে সব জেলায় বেলুন উড়ানো হবে।
শুক্রবার (৩ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জেলা প্রশাসকদের (ডিবি) সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে। সেই বৈঠকে এসব প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক জেলা স্টেডিয়ামে প্রজেক্টর স্থাপন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। এসব স্থানে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঢাকার হাতিঝিলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান সম্প্রচারসহ সরকারিভাবে এখানে বর্ণাঢ্য সাজ-সজ্জা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও জানা গেছে।
ওইদিন সেতু উদ্বোধনের পর কাঁঠালবাড়ি প্রান্তে জনসভার আয়োজন করেছে আওয়ামীলীগ। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। এই জনসভায় ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ ঘটনানোর প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি পদ্মাসেতুর দুই প্রান্তে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামীলীগ। বাধা অতিক্রম করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের পাশাপাশি পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর, চট্টগ্রাম, বেনাপোল স্থল বন্দরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন হবে। এর ফলে দেশের অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। আর এ কারণেই ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে এই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে ইতিহাসে স্থান করে নিতে চায় আওয়ামীলীগ।
দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা অর্থাৎ ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর থেকে সেতু এলাকায় বিপুল জনসমাগম ঘটানোর জন্য স্ব-স্ব জেলা আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নেবে। মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগও এ ধরনের উদ্যোগ দেবে। এছাড়া দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলা অর্থাৎ খুলনা ও বরিশাল বিভাগ থেকেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ বিপুল জনসমাগম এই জনসভায় অংশ নেবে। সেতু এলাকায় ওইসব অঞ্চল থেকে যাতে বিপুল জনতা সমবেত হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
এই প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী লিটনসহ ওই এলাকার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেছেন।
ওই নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং কর্মসূচি সফর করতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছছাড়া দেশের ৬৪ জেলা থেকেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা পদ্মাসেতু স্থলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও তারা জানান।
এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার পাড়ে বিশাল জনসমাগম ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পদ্মা, মেঘনা পাড়ের মানুষ, বৃহত্তর ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, চাদপুর জনসভাস্থলে লাখ লাখ জনসমাগম ঘটবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ আসবে, গোটা এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এটা শুধু উৎসমুখরই নয়, একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এটা সরকারের এদেশের ১৭ কোটি মানুষের বিশাল সফলতা। যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের মুখে রাজনৈতিক চপেটাঘাত হবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একবিংশ শতাব্দির মাইলফলক অর্জন, এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ইতিহাসের পাতায় যাতে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে তার জন্যই এত বিশাল আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২২
এসকে/এএটি