ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য, বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের অবদান দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাইফুর রহমানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাইফুর রহমানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি তার আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব সর্বজনবিদিত। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
ফখরুল বলেন, সাইফুর রহমান একজন প্রাজ্ঞ ও কীর্তিমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন। তার দক্ষ রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভূত সুনাম অর্জন করে। তিনি স্বদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম পথিকৃৎ। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী, অটুট মনোবল এবং ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শহীদ জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও তার মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে সাইফুর রহমান দেশকে কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবেই স্বাবলম্বী করেননি বরং স্বদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারে বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সহকর্মী হিসেবে তার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের অবদান দেশবাসী ও দল চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়া সরকারের একজন দক্ষ অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে ১২টি বাজেট উপস্থাপনের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
সাইফুর রহমান সম্পর্কে-
তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মায়ের নাম তালেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন তিনি, মাত্র ৬ বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। সে সময়ে তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান তিনি। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার, ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৯৬০ সালের ১৫ই জুলাই তিনি বেগম দূররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাইফুর রহমান তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে ডাক দেন তাকে। তিনি তাই করলেন। রাজনীতিতে এলেন, আলোকিত করলেন, আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। সাইফুর রহমান দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কৃতিত্বের সঙ্গে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
এমএইচ/জেডএ