ঢাকা: ক্ষমতাসীন সরকার দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, যখন দেশের মানুষকে সীমান্তে হত্যা করছে, তিস্তার পানি দিচ্ছে না তখন প্রধানমন্ত্রী ভারতে নেচে গেয়ে উৎসব করছেন।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের দোতলার মিলনায়তনে ‘রাজনীতি পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলদেশ’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উম্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বইটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র সাবেক ছাত্র ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বইটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। যখন দেশে ইতিহাস বিকৃতির সুপরিকল্পনা চলছে সেই মুহূর্তে এমন বই লিখে প্রকাশ করা কঠিন কাজ এবং প্রশংসনীয়। সাধারণত এ ধরনের বই গ্রহণযোগ্য হয় যখন নির্মোহভাবে লেখা হয়। লেখক রাজনীতি করলেও ইতিহাসের আলোকে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা একটা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। স্বাধীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। আমরা জাতি হিসেবে এখানে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছি। ১৯৭২ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্লজ্জভাবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তারা ভোটের বাক্স তুলে নিয়ে গেছে। সেই তখন থেকেই দুর্বৃত্তায়নের শুরু। যদিও তারা এমনিতেই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
তিনি বলেন, কেনো সেদিন রক্ষী বাহিনী তৈরি হয়েছিল? কেনো বাকশাল করতে হয়েছিল? কেনো একজন ব্যক্তিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে হবে। কেনো আপনাদের থেকে জাসদের জন্ম হলো? এসব উত্তর আওয়ামী লীগ ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা দেন না। তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। মূলত তখন থেকেই তারা দেশের সব ন্যায় নীতিকে ধ্বংস করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা দেশকে সম্পূর্ণরূপে দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। আজকে হাওরের ওপর দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে। তারা সেখানে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ২৬ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে! যেখানে দেশের ২৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সেখানে এ ধরনের বিলাসি প্রকল্প নিঃসন্দেহে প্রশ্নবোধক।
তিনি বলেন, আজকে ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেচে গেয়ে উৎসব করেছেন। যখন দেশের মানুষকে হত্যা করছে, তিস্তার পানি দিচ্ছে না তখন তিনি ভারতে গিয়ে কি আনলেন? আমরাও তো ভারতের সাথে সবসময় সুসস্পর্ক চাই। আসলে সরকার মানুষকে প্রতারিত করছে। তারা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও কোনো বিচার নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের আবারও মারধর করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। অনেককে হত্যা ও আহত করা হয়েছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি বইটি পড়েছি। অনেক বিষয়ের সমাহার ঘটেছে। কিছু কিছু লেখকের নিজস্ব মতামতও রয়েছে। যা লেখকের সাহসিকতার প্রমাণ বহন করে। যারা পড়ালেখা করেন তাদের জন্য বইটি কাজে আসবে। বইটি বেশ তথ্যবহুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ সভাপতি অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বইটির লেখক ও কলামিস্ট মো. হারুন অর রশিদ, প্রকাশক জহির দীপ্তি, স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মো. নূরুজ্জামান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
এমএইচ/এএটি