ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সবেধন আব্দুর রশিদ!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪
সবেধন আব্দুর রশিদ! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কথা ছিলো গ্রাহকদের অভিযোগ শুনবেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। এজন্য না-কি ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হয়।

দেওয়া হয়েছিলো ৫টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপণও।

কিন্তু হায়! বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এ গণশুনানিতে মাত্র একজন এলেন তার অভিযোগ জানাতে। তিনি ২০১৩ সালে আবেদন করেছিলেন বিদ্যু‍ৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংযোগ পাননি তিনি।
 
রাজবাড়ী জেলা থেকে এই অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন আব্দুর রশিদ। অনেকে বলাবলি করছিলেন, এখন আর সবেধন নীলমণি নয়, সবেধন আব্দুর রশিদ!
 
তার অভিযোগ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকে) বিরুদ্ধে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওজোপাডিকোর এমডি আবুল কালাম আজাদ।

প্রতিমন্ত্রীর সামনে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েন ওজোপাডিকোর এমডি। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন বারবার।

এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলে ওঠেন, ‘এমডি সাহেব বলেন, কেন তাকে এতদিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ’
 
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্যার আমি বিষয়টি দেখব। অভিযোগকারীর আবেদনটি নিয়ে রাখছি। ’

তার এই জবাবের পর প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওজোপাডিকো জনগণের সম্পদ। ওরা বিল দেয় বলেই আপনার বেতন হয়। এ কথা আপনাদের মাথায় থাকতে হবে। ’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতে চাই। বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে সংযোগ দিতে না পারলে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। যাতে গ্রাহকরা হতাশ না হন। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি সংস্থায় কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার থাকতে হবে। সেখান থেকে গ্রাহকরা যেন সঠিক তথ্য পেতে পারে। তাদেরকে বাস্তব অবস্থা জানাতে হবে। কেন, কী কারণে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না এবং কবে নাগাদ সংযোগ দেওয়া হবে- সব তথ্য তাদের জানাতে হবে। কোনো গ্রাহককে অন্ধকারে রাখা যাবে না। ’

সভার শুরুতেই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে গ্রাহকদের অভিযোগ এবং সুপারিশ শুনতে চাই।

বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা শুরুতেই শিল্প গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে চাই।

কিন্তু এতে কেউ সাড়া দেননি। এবার ভয়ে ভয়ে দাঁড়ান ‘সবেধন’ আব্দুর রশিদ। তিনি তার অভিযোগ বলেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী তখন বলেন, ‘তার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিলেন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং উইং থাকা প্রয়োজন। ’

২০১৪ সালের পর থেকে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু এখন কেন আবার পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষে না।
 
মূলত বিদুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম কম বলেও দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু ৩৪৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালে তা ১ হাজার কিলোওয়াটে উন্নীত হবে। এতে মূল্য সমন্বয় করার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন মাস্টার রিভিউ করতে হচ্ছে। ’

এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বলেন, আমরা একইসঙ্গে শিখছি এবং বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। এতদিন এলোমেলোভাবে চলেছি। এখন নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে রামপালের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। মাতারবাড়ি থেকেও ২০১৮ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পেতে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, অনেক অগ্রগতি হয়েছে পটুয়াখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির যেখানে ১ বছর লেগেছে সেই কাজ নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি করেছে ৪ মাসে।

গণশুনানিতে অন্যদের ম্যধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ, ঢাকা পাওয়া ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) চেয়ার‌ম্যান তাপস কুমার রায়, ডেসকোর চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কায়কাউস এবং বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা সমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।