ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিনিময় ছয় মিলিয়ন, দেশের ক্ষতি ৪৫ মিলিয়ন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
বিনিময় ছয় মিলিয়ন, দেশের ক্ষতি ৪৫ মিলিয়ন

ঢাকা: দেড় দশক ধরে লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অপারেটিং রেট) সূচক নিম্নগামী রয়েছে। ঠিক এই সময়ে হেজিং পদ্ধতিতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে আশুগঞ্জ ‍পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিসিএল)।


 
এতে করে রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটির ৪৫ মিলিয়ন ডলার বেশি সুদ গুণতে হবে বলে জানা গেছে। এই ঋণ গ্রহণকালে বিদেশি একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেন-দেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর এপিসিএল’র সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক  নুরুল আলম ও চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
 
জানা গেছে, এপিসিএল’র ৪৫০ মেগাওয়াট সাউথ পাওয়ার প্লান্টের জন্য হেজিং পদ্ধতিতে এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। যার জন্য সাড়ে তিন শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে বাংলাদেশকে।
 
অন্য দিকে একই ঋণ লাইবর পদ্ধতিতে নেওয়ার সুযোগ ছিল। লাইবর পদ্ধতিতে সুদের হার দশমিক চার শতাংশ বিরাজ করছে। ১৯৯৯ সাল থেকেই নিম্নমুখী এই সুদের সূচক।
 
এ রকম একটি সময়ে সাড়ে তিন শতাংশ হারে হেজ পদ্ধতিতে ঋণ নেওয়াকে আত্মঘাতী মনে করছেন অনেকে। আর সঙ্গত কারণেই এর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
 
অভিযোগ উঠেছে সানফ্রান্সিসকো শহরের ‘ওয়েলস ফারগো’ ব্যাংকের একটি শাখায় এপিসিএল’র সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে মাহফুজ ‌আলমের মাধ্যমে এই লেনদেন হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হাতে বিদেশি ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে দুই মিলিয়ন ডলারের লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে।
 
আশুগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিটটির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে একটি স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান। স্পেনের একটি ব্যাংক থেকে দুই মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করা হয়েছে। সে কারণে সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে বলে বিদ্যু‍ৎ বিভাগের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
 
এপিসিএল’র চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন ‍বাংলানিউজকে জানান, অনিয়ম বা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে অবৈধ লেনদেনের কোনও সুযোগ নেই।
 
চড়া সুদে কেনও ঋণ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন বলেন, দেখতে বেশি মনে হলেও হেজ পদ্ধতিতে ঝুঁকি কম। লাইবর সব সময় ওঠানামা করে। অপরদিকে হেজিং স্থায়ী। তিন বছর পর থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হবে।

তিনি বলেন, এখন লাইবর সর্বনিম্ন স‍ূচক বিরাজ করছে। তাই লাইবরের চেয়ে হেজিং নিরাপদ মনে করে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে।
 
এপিসিএল’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আশুগঞ্জে সব ঋণ’ই লাইবর পদ্ধতিতে নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে শুধু এই দু’টি ঋণ হেজ পদ্ধতিতে নেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, সাশ্রয়ী লাইবর পদ্ধতিতে ঋণ না নিয়ে হেজিং পদ্ধতিতে ঋণ নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন।
 
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার ‍হোসেন বলেন, চাপ দেবো কেনো? রাষ্ট্রের স্বার্থেই হেজে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে দোষের কিছু দেখি না।
 
বিদ্যু‍ৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, নিশ্চিত না হয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারি না। তার কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্য এসেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
এসআই/এসইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।