ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সংকুচিত হবে বাপেক্স

স্থলেও সুযোগ পাচ্ছে বিদেশি কোম্পানি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
স্থলেও সুযোগ পাচ্ছে বিদেশি কোম্পানি

ঢাকা: কথা ছিল স্থলে আর বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) নয়। স্থলে কাজ করবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি)।

কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে সরকার।
 
এবার স্থলও বিদেশি কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এজন্য বাপেক্সের জন্য নির্ধারিত স্থান রেখে নতুন করে পিএসসি আহ্বান করা হবে। এর প্রস্তুতি চলছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
 
২০১৪ সালেও বলা হয়েছিলো, স্থল ভাগে কাজ করবে দেশীয় কোম্পানি। আর সমুদ্রে তেল-গ্যাস আহরণে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা নেই তাই পিএসসি করা হচ্ছে। কিন্তু পুরো উল্টো পথে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকার বলছে দ্রুততম সময়ে গ্যাস উত্তোলন বাড়াতেই এ উদ্যোগ।
 
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবুবকর সিদ্দিক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্থলে পিএসসি আহ্বানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কোন কোন ব্লক দেওয়া হবে, তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বাপেক্সের জন্য এলাকা নির্ধারিত রেখে পিএসসি করা হবে।
 
এসব পিএসসিতে বাপেক্সের অংশীদারিত্ব রাখা হবে। যাতে বাপেক্স তাদের সঙ্গে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে, জানান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব।

স্থলের কোন কোন ব্লকে পিএসসি করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউই।
 
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেছেন, আমরা এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো চিঠি পাইনি। তবে মুখে মুখে শুনেছি, স্থলে নাকি পিএসসি করা হবে। এর বেশি কিছু জানি না।
 
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাপেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ বাপেক্সকে গলা টিপে হত্যা করার শামিল। কিছুদিন পর যখন সব ব্লক ইজারা দেওয়া হবে, তখন বাপেক্স কী করবে?
 
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে, বাপেক্স বিদেশে গিয়ে কাজ করবে। বিদেশি কোম্পানির চাপে যখন নিজের দেশে কাজ পাচ্ছে না, তখন বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারবে, কতটুকু আশা করা যায়? আর কে এ কথা বিশ্বাস করবে! অন্যরা বিশ্বাস করলেও, আমি বিশ্বাস করি না।
 
বাপেক্সের সাবেক এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, শ্রীকাইল বাপেক্সের নিজের ব্লক, সেখানে কূপ খনন করার সব প্রক্রিয়া শেষ করেছিলো তারা। এর জন্য ৬৪ কোটি টাকার ডিপিপি তৈরি করা হয়। বাপেক্স বোর্ড সেই ডিপিপি অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিশেষ মহলের চাপে সেই ডিপিপি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে বাপেক্স। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি ২’শ কোটি টাকার নতুন ডিপিপি করে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে। আর সেই টাকাও বাপেক্সকে পরিশোধ করতে হবে।
 
নিজে যে কাজ করলে ৬৪ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়, সেই কাজের জন্য বিদেশি কোম্পানিকে ২’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বাধ্য হয়েছে বাপেক্স। বিদেশি কোম্পানির লবিংয়ের কাছে নিজের ফিল্ডে পরাজিত হয়েছে। সেই বাপেক্স বিদেশে গিয়ে কাজ করবে। এ কথা এই মুহূর্তে পাগল ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পটিয়া, জুলধা, সীতাপাহাড় ও কাঁচালং এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) আহ্বান করা হয়েছে। ইওআই আহ্বানের জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এতে আগ্রহী বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বাপেক্স। বর্তমানে বাপেক্স হাতে মাত্র দু’টি ব্লক রয়েছে (৮ ও ১১)।  
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, স্থলে পিএসসি আহ্বান করা দেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। সরকারের উচিত হবে, বাপেক্সকে দিয়ে ‍কাজ করানো।
 
প্রসঙ্গত ১৯৮৯ সালে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশকে মোট ২৩টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছিল। যার ৫টি ব্লক ছিল অগভীর সমুদ্রসীমায় ও ১৭টি স্থল ভাগে। ২০০৬ সালে সমুদ্র এলাকাকে মোট ২৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়।

নতুন মডেল পিএসসি ২০০৮ এর অধীনে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার ২৮টি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে পেট্রোবাংলা ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। চিহ্নিত ২৮টি সমুদ্র ব্লকের মধ্যে ১২টি (৪, ৬, ৭, ৮, ১৯ ও ২২-২৮ নং ব্লক) ব্লকের জন্য কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। মাত্র কয়েকটি ব্লকের জন্য দরপত্র জমা পড়ে।

সাগরে খনিজ অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ যে গ্যাস ব্লক তৈরি করেছে তার মধ্যে ০৫, ০৬, ০৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৯, ২০, ২৪, ২৫ নম্বর ব্লকে নিজেদের অংশ আছে বলে দাবি করেছিল ভারত। এর মধ্যে ০৫, ০৬, ০৯, ১০, ১৪, ১৯, ২৪ নম্বর ব্লকের প্রায় পুরোটাই তারা দাবি করেছিল। সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের ফলে ২৪, ১৯, ১৪, ০৯, ০৫ এবং ০১ নম্বর ব্লকের কিছু অংশ ভারত পেয়েছে।
 
বর্তমানে সাগরের শুধু ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে কাজ করছে কনোকো ফিলিপস। পরে সাত নম্বর ব্লকটি বহুজাতিক এ কোম্পানিকে দেওয়া হয়।
 
স্থলভাগে শেভরন বাংলাদেশ ব্লক ১২, ১৩ ও ১৪ থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। বহুজাতিক এ কোম্পানিটি দেশে দৈনিক উৎপাদিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪’শ ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস একাই উৎপাদন করছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলার বাঙ্গুরা থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে বহুজাতিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জি। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ৩ কোম্পানি দৈনিক ১১’শ ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগান দিচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এসআই/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।