ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কিল মারার গোঁসাই!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
কিল মারার গোঁসাই! ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: জ্বালানি তেলের দাম কমলে গাড়ি মালিকেরা কি ভাড়া কমাবে? জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- সম্ভব না। আর এ কারণেই নাকি জ্বালানি তেলের ‍দাম কমানো হচ্ছে না।


 
জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি) এমন কথাই বাতাসে ভাসছে। কিন্তু সিএনজির দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনে অনেক ক্ষেত্রেই ভাড়া বেড়ে গেছে। ট্রাক ভাড়া লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু নেতা-মন্ত্রীরা তা ঠেকাতে পারছেন না। হুমকি-ধামকিতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
 
জ্বালানির মূল্য যখন সাড়ে ১৬ শতাংশ বেড়েছে, তখন ৩০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। আর সেই ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। সোমবার রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) যৌথসভা। ওই সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
তবে মালিক পক্ষ সরকারকে খুব বেশি সময় দিতে রাজি নয়। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। যা করার এর মধ্যেই করতে হবে। ১০ তারিখের পর আগের ভাড়ায় যাত্রীবহন করবেন না তারা। এর অর্থ হচ্ছে, এখন কিছু কিছু বাস-হিউম্যান হলারে আগের ভাড়া নেওয়া হলেও সেই সুযোগও আর থাকছে না।
 
সরকারের এই আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ জনগণ। মতিঝিল এলাকার একটি ব্যাংকে চাকরি করেন গোলাপ হোসেন। প্রতিদিন মিরপুর থেকে যাতায়াত করেন।

তিনি বাংলানিউজের মাধ্যমে জানতে চান, সরকার কি বাস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে? তারা ভাড়া কমাতে পারে না; কিন্তু বাড়াতে এত তোড়জোড় কেন? অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ‘ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই!’
 
তিনি বলেন, এর আগে যখন সিএনজির দাম বেড়েছে, তখন এক লাফে বাসের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। সেই অরাজকতা ঠেকাতে পারেনি সরকার। সিএনজিচালিত অটোরিকশা কোনো দিনই মিটারে চলেনি। তাদের সঙ্গে সরকার পারে না। সরকারের সব ক্ষমতা যেন জনগণের ওপর। নির্ধারিত ভাড়া কেউই মানছেন না!

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন, ধরেন, জ্বালানি তেলের দাম কমলো। তালে কার লাভ হবে? বাস মালিকরা কি ভাড়া কমাবে? কমাবে না। তাহলে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে বাস মালিকদের আয় বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরেক শ্রেণির লোকজন লাভবান হবেন। যাদের নিজেদের গাড়ি রয়েছে, তাদের। যারা কোটি টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করেন, তাদের সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে না সরকার।
 
তেলের দাম কমালে যদি তারা সুবিধা নাই ভোগ করতে পারেন, তাহলে দাম কমিয়ে কী হবে! সে কারণে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান নসরুল হামিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি তেলের দাম না কমিয়ে কৃষকদের ভর্তুকির ব্যবস্থা করি, তাহলে প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে। সে দিকেই যাওয়াই ঠিক হবে।
 
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (ক্রড অয়েল) প্রতি ব্যারেলের দাম উঠেছিল ১২২ ডলার। সেই বৃদ্ধির অজুহাতে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় বাংলাদেশে। তখন পেট্রোল-অকটেন লিটারপ্রতি ৫ টাকা ও ডিজেল কেরোসিনের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।
 
ক্রুড ‍অয়েলের দাম কমতে কমতে ৩৮ ডলারে নেমে এসেছে। প্রথম দিকে বলা হয়েছিল, বিপিসি আগে লোকসান দিয়েছে, সেগুলো পুষিয়ে নিক। একই সঙ্গে মনিটরিং করি। যদি দাম কমেই থাকে, তাহলে দেশেও দাম কমানো হবে। কিন্তু অনেকদিন ধরে দাম কম থাকলেও এখন উল্টো সুরে গাইছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
তেলের দাম কমলে বাস-ট্রাকের ভাড়া কমানো সম্ভব কিনা সে বিষয়ে পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী সরকার দলীয় নেতা, মন্ত্রী কাম পরিবহন শ্রমিক নেতাদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। তাতে নাকি না-সূচক জবাব এসেছে। সে কারণে থেমে গেছে তেলের দাম কমানোর প্রক্রিয়া। যদিও অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

গত (২৬ আগস্ট) বুধবার সিএনজির দাম প্রতি ঘনফুটে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার; যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে সরকার ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করলে ওই বছরের ২০ জানুয়ারি দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা বৃদ্ধি করে এক টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। তবে সব রুটেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিচ্ছেন পরিবহন মালিকেরা।

এর আগে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনজির দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। তখন কিলোমিটার প্রতি এক টাকা ৬০ পয়সা বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় মিনিবাস ৫ টাকা, বড় বাস ৭ টাকা। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় চলাচলকারী কাউন্টার সার্ভিসের বাসগুলো সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করছে।

এমনকি বিআরটিসির বাসেও ক্ষেত্রে বিশেষে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে না; প্রতিনিধিত্ব করছে ব্যবসায়ীদের।

মন্ত্রীদের এ সব কথাবার্তায় সাধারণ মানুষ হতাশ। অবিলম্বে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপক শামসুল আলম।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫
ইএস/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।