ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সঞ্চালন লাইনের কারণে রূপপুরের বিদ্যুৎ পেতে দেরি হতে পারে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
সঞ্চালন লাইনের কারণে রূপপুরের বিদ্যুৎ পেতে দেরি হতে পারে

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ পেতে দেরি হতে পারে। আগামী বছর ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে যে সঞ্চালন লাইনের প্রয়োজন তার কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আরএনপিপি প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন সঞ্চালন লাইন স্থাপনে দেরি হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রকল্প থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। আর এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি দুই মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আরএনপিপি দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। পাশাপাশি এটি এ যাবতকালে দেশের সব চেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি পূর্বনির্ধারিত সময়েই উদ্বোধন করতে চায় সরকার। সে অনুযায়ী কাজও এগিয়ে গেছে। টার্গেট ঠিক রাখতে ২০১৮ সালে সঞ্চালন লাইন নির্মাণেরও অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এর কাজ দেরি হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এখন ডলার সংকটের কথা বলছে। ডলার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে সঞ্চালন লাইনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়েই সব কিছু এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো এবং উপায় খোঁজা হচ্ছে বলেও ওই সূত্রটি জানায়।

এই পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়ে এই প্রকল্প থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, সঞ্চালন লাইন নির্মাণে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করে কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা  করছে। আমাদের (বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়) যদি কিছু করার থাকে যতটুকু সহযোগিতা সম্ভব করব। রূপপুরের কাজ যথা সময়ে শেষ হবে আশা করি। এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি সঞ্চালন লাইনের কাজও এই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দুই ইউনিট বিশিষ্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত এই প্রকল্পের দুটি ইউনিটের প্রতিটি থেকে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানির বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে দেশের চাহিদা মেটাতে এই প্রকল্পটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ১৯ অক্টোবর এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত,  সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্রটি আরও জানায়, এই প্রকল্পটিকে যথা সময়ে উৎপাদনে নিতে বাংলাদেশ ও রাশিয়া উভয় দিক থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছরের করোনা মহামারিতেও এই প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি। ইউক্রেন, রাশিয়ার চলমান যুদ্ধেও এই প্রকল্পের কাজে কোনো প্রভাব পড়তে দেওয়া হয়নি। এখন সঞ্চালন লাইনের কারণে যাতে উৎপাদন বিলম্বিত না হয় সে জন্য সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে নানা দিক থেকে তৎপরতা চলছে। এর জন্য রাশিয়ার সহযোগিতাও নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে দেশটির কাছে সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে। এসব বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়।
 

সঞ্চালন লাইন তৈরিতেও রাশিয়ার সহযোগিতা চাওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান জানান, সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে। তাদের বলা যায়, কিছু করার থাকে সেটা করতে। এই প্রকল্পের কাজ আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে চাই।
গত ১৯ অক্টোবর আরএনপিপির দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছর ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদনে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রকল্প বাস্তবায়নকারি প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভেও জানান, আগামী বছর এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জ্বালানি লোডিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে আগামী বছর সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আনা হবে। এ প্রকল্পের জ্বালানি ইউরেনিয়াম যা সরবরাহ করবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সরবরাহকারি কোম্পানি। বাংলাদেশ সেপ্টেম্বরে জ্বালানি আনতে চেয়েছে। তবে রাশিয়া অক্টোবরের কথা বলেছে। বিষয়টি এই পর্যায়েই রয়েছে। তবে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে জ্বালানি আসবে। জ্বালানি আসার দুই মাসের মধ্যে লোডিংয়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে হবে বলে আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান।

গত ১৮ অক্টোবর আরএনপিপির সাইট পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, আমরা সেপ্টেম্বরে দিকে বলেছি, তারা অক্টোবরের কথা বলেছেন। এর মধ্যেই জ্বালানি এসে যাবে। জ্বালানি আসার দুই মাসের মধ্যে লোডিংয়ে যেতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এসকে/আরএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।