ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ওষুধে ইন্দোনেশিয়া হবে নতুন গন্তব্য

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৭
ওষুধে ইন্দোনেশিয়া হবে নতুন গন্তব্য ফার্মাসিস্ট খুরশিদ আলম

জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া থেকে): প্রায় ২৬ কোটি মানুষের দেশ ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। হাতছানি দেয়া সেই সম্ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চান দেশটির ওষুধ শিল্পে ভূমিকা রেখে চলা বাংলাদেশের খুরশিদ আলম।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার চৌধুরীগাঁও গ্রামের সন্তান খুরশিদ আলম ইন্দোনেশিয়ায় বহুজাতিক একটি ওষুধ কোম্পানির প্লান্ট হেড (কারখানা প্রধান) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘নোভারটিস’-এর প্লান্ট হেড হিসেবে ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পা রাখেন তিনি।

দেশে উৎপাদিত মানসম্মত ওষুধের ৯৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১২৭টি দেশে রপ্তানি হলেও ইন্দোনেশিয়ার বাজারে সেভাবে প্রবেশ করতে পারেনি বাংলাদেশ।

সম্ভাবনা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ার বাজারে কেন ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশিদ আলম বলেন, “এটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন। আমাদের ওষুধ এ দেশে থাকবে না- এটা মেনে নেয়াই যায় না। যদিও এখানে বাইরের ওষুধ প্রবেশে নিয়ম-কানুন বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তা সত্ত্বেও উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে এ দেশটিও হতে পারে ওষুধের সেরা গন্তব্য। ”

বাবা হাজী আম্বর আলী মাস্টার। তিনভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় খুরশিদ আলম বিগত দুই যুগের বেশি সময় ধরে জড়িত ওষুধ শিল্পে। ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। মাস্টার্স শেষ করে ১৯৯১ সালে যোগ দেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে। ১৯৯৩ সালে যোগ দেন সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি সিবা গেইগি বাংলাদেশে। ১৯৯৭ সালে নোভারটিসে যোগ দেন তিনি।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ফার্মাসিস্ট থেকে ডেভেলপমেন্ট হেড, সাইট হেড, কোয়ালিটি হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা খুরশিদ আলম ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় নোভারটিসের কারখানা প্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত হন।

খুরশিদ আলম বাংলানিউজকে জানান, ইন্দোনেশিয়ায় আমাদের মতো দেশ থেকে ওষুধ প্রবেশে রেজিস্ট্রেশন ফর্মালিটিজটা বেশ জটিল। ধরেন, এখানে দুটো কোম্পানি একই ধরনের ওষুধ তৈরি করছে। তৃতীয় কোনো কোম্পানি একই জেনেটিকের ওষুধ আমদানি করতে চাইলে তা এখানে সম্ভব না। কারণ, ইন্দোনেশিয়ার নীতি আমদানির চাইতে তার নিজস্ব কারখানার ওষুধকে সুরক্ষা দেয়া।

তিনি বলেন, মানুষ সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে কিন্তু সেই ওষুধ যদি মানহীন হয় তবে সুস্থতার বিষয়টি অনিশ্চিতই শুধু নয়, জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই নীতিটাই কঠোরভাবে মেনে চলে দেশটি। যে ওষুধটা এখানে তৈরি হয় না কেবল সেটাই আমদানির ছাড়পত্র দেয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ওষুধ স্থানীয় অধিবাসীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার আগে কার্যকারিতা পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে হয়। বায়ো ইক্যুইভ্যালেন্স স্টাডি (বিস্ট্যাডি) করাতে হয়। বিস্টাডি করাতে হয় লোকাল মার্কেট থেকে স্থানীয় জনসাধারণ ও সিআরও’র মাধ্যমে। এ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ। অরিজিনেটের সঙ্গে লোকাল ওষুধ তুলনা করতে ইন্দোনেশিয়ান পরিবেশ ও পপুলেশনের ওপর স্টাডি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্দোনেশিয়া স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদনকে গুরুত্ব দেয় জানিয়ে খুরশিদ আলম আরও বলেন, আরেকটি জিনিস এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দেশটি ওষুধ আমদানির বিষয়ে বেশ রক্ষণশীল। তারা উৎসাহ দেয় স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদনকে। কাউকে যদি ওষুধ আমদানির অনুমতি দেয়াও হয় তবে শর্ত বেঁধে দেয়া হয় ৫ বছরের মধ্যে সেই ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে হবে। অর্থাৎ আমদানির চাইতে উৎপাদনেই জোর দেয়া হয় বেশি। এখানে একটি জেনেটিকের ওষুধ আমদানির সময়সীমা ৫ বছর থাকায় অনেকে রপ্তানিতেও সেভাবে উৎসাহ পান না। কারণ, ওষুধ প্রবেশ করার পর মার্কেটিং থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেও তো সময় লাগে।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশের উদ্যোক্তারা এ দেশের প্রক্রিয়াগুলোর বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেননি। যে কারণে সম্ভাবনাগুলোকেও সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি- জানান খুরশিদ আলম।

তবে তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেই নোভারটিস দুই ধরনের ওষুধ আনছে বাংলাদেশ থেকে। এখন সেই পথ ধরে ধৈর্য ও সময় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকরা এ দেশে অগ্রসর হলে নতুন আরেকটি বাজার খুঁজে পাবে বাংলাদেশ- এমন স্বপ্নই দেখেন খুরশিদ আলম।

তার মতে, ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ব্যবস্থাপনায় ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। এখানে অফুরান সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে প্রস্তুত হাইটেক মেডিসিনের। যক্ষ্মার ভ্যাকসিন বা ক্যান্সারের মতো রোগের প্রতিকার আর প্রতিষেধক হিসেবে যে ওষুধগুলো ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি হয় তাতে আস্থা কম ইন্দোনেশীদের। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ইন্দোনেশিয়ার বাজারে এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ- অভিমত ফার্মাসিস্ট খুরশিদ আলমের।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৭
জেডআর/এমজেএফ

আরও পড়ুন
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!​
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!

** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!​
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
**ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।