ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

প্রশান্তিময় মসজিদ ‘ফেনী জহিরিয়া’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
প্রশান্তিময় মসজিদ ‘ফেনী জহিরিয়া’

ফেনী: ফেনী শহরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের যদি প্রশ্ন করা হয় কোনো মসজিদে নামাজ পড়তে বেশি প্রশান্তি। সবাই এক বাক্যে বলবে ‘ফেনী জহিরিয়া’।

এ প্রশান্তির কারণেই প্রতি ওয়াক্তে এখানে নামাজ পড়তে আসেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতি জুমায় এ সংখ্যা বেড়ে য়ায় কয়েকগুন। এ রমজানে এই মসজিদে এক সঙ্গে ইফতার করেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ। তারাবীহ পড়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকই।

ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের (এসএসকে) ডাক্তার পাড়া মোড় এলাকায় স্থাপিত এ মসজিদটি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ মসজিদে ফেনী ও আশপাশের এলাকা থেকে ছুটে আসা মুসল্লিদের মতে এটি হচ্ছে জেলার সর্বাধিক সুন্দর শৃঙ্খলিত মসজিদ।  

শুধু নামাজ নয়, এ মসজিদে নিয়মিত চলে নূরানী মাদরাসা, হেফজ বিভাগ, কোরআনের তাফসীর, বয়স্ক কোরআন শিক্ষাসহ নানা কার্যক্রম। রোজায় যোগ হয় জেলার সব চেয়ে বড় গণ ইফতার ও তারাবির নামাজ। মসজিদটিতে নামাজের সময় নিরাত্তায় নিয়োজিত থাকেন বেশ কয়েকজন খাদেম। মসজিদের ছাদ থেকে ঝোলানো ঝাড়বাতি, দেয়ালের নান্দনিকতা আর মেঝেতে উন্নতমানের পাথর এবাদতে প্রশান্তি দিয়ে থাকে মুসল্লিদের।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ১৯৪০ সালে সরকারি কর্মকর্তা মরহুম জহির উদ্দিনের দান করা ১৩০ শতক ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ফেনী জহিরিয়া মসজিদ। ২০০৬ সালে পুরাতন মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে পরিচালনা কমিটি। বর্তমানে মসজিদটির ৩য় তলা পর্যন্ত প্রস্তুত করা হয়েছে। ৪র্থ ও ৫ম তলার ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। মুসল্লিদের এবাদতে প্রশান্তির জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। মসজিদটির দেয়ালে দেয়ালে নান্দনিকতা ও আভিজাত্যের ছোঁয়ায় মুসল্লিদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে।  

বিশেষ এবাদতের দিনে মসজিদটির পঞ্চম তলা পর্যন্ত হাজার হাজার মুসল্লির পদভারে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। জুমার দিনে মূল ভবণে জায়গা না পেয়ে অনেক মুসল্লি রাস্তায় নামাজ আদায় করতে বাধ্য হয়।

মসজিদ কমিটি জানায়, ২০০৬ সালে মাত্র ৬ লাখ টাকা নিয়ে মসজিদটি পুনর্র্নিমাণ কাজ শুরু করা হয়। বিদেশি কোনো সংস্থ্যা কিংবা ব্যক্তির সহযোগিতা ছাড়াই এ পর্যন্ত অন্তত ৮ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। কাজ এখনও চলমান রয়েছে। মুসল্লি ও আশপাশের মানুষের দান অনুদানে মসজিদটি নির্মাণে সর্বধুনিক ডিজাইন কাজে লাগানো হয়েছে।

মসজিদের পাশেই বড় পরিসরে নির্মাণাধীন জহিরিয়া টাওয়ারে বড় পরিসরে মাদরাসা ও এতিমখানা চালু করা হবে। এছাড়াও লাইব্রেরি, ট্রেনিং সেন্টার, বয়স্ক কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমসহ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধুনিক ও যুগোপোযুগি কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসা সাংবাদিক দুলাল তালুকদার বলেন, তার বাসা শহরের নাজির রোড়ে, সেখানে আশপাশে বেশ কয়েকটি মসজিদ থাকলেও রমজানে তারাবীহ পড়ার জন্য তিনি প্রায় এক কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দিয়ে জহিরিয়া মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন। তিনি বলেন, এত দূর থেকে এসে এখানে নামাজ আদায় করার কারণ একটাই ‘প্রশান্তি’। শহরের অন্যকোনো মসজিদে তারাবীহ পড়ে এতটা প্রশান্তি পাওয়া যায় না।
 
জসিম উদ্দিন নামের একজন বলেন, এই মসজিদের খতিবের বক্তব্য গতানুগতিক নয়। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গঠনমূলক ভাল আলোচনা করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবীহ যারা পড়ায় সবার তিলাওয়াত অনেক সুন্দর। এসব কারণে এ মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য ছুটে আসি।
 
মসজিদটির খতিবের দায়িত্বে থাকা মাওলানা মুফতী ইলিয়াছ বলেন, ফেনী জহিরিয়া মসজিদ এ অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রিয় ইবাদত খানায় পরিণত হয়েছে। এখানে ইবাদত করে মানুষ তৃপ্তি পায় প্রশান্তি পায়। আমরা চেষ্টা করি সুন্দর তিলাওয়াতে ও শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এসএইচডি/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।