ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ইতেকাফের বিধান ও প্রকার

কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
ইতেকাফের বিধান ও প্রকার

ইতেকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা বা কোনো স্থানে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতেকাফ বলা হয়, আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য এক বিশেষ সময় এবং বিশেষ নিয়মে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখা।

লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য ইতেকাফ করা সুন্নত। সহিহ বোখারিতে প্রমাণিত আছে, নবী করিম (সা.) ইতেকাফ করেছেন, তার সঙ্গে সাহাবায়ে কেরামও ইতেকাফ করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব ‎দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে ‎তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকুকারী-‎সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ’ -সূরা অাল বাকারা: ১২৫

সহিহ মুসলিমে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) রমজানের প্রথম দশকে ইতেকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় দশকে ইতেকাফ করেছেন। অতঃপর বলেন, ‘নিশ্চয় আমি রমজানের প্রথম দশকে ইতেকাফ করে এই রাত্রি (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধান করেছি। তারপর দ্বিতীয় দশকে ইতেকাফ করেছি। অতঃপর ঐশী আগন্তুক কর্তৃক আমাকে বলা হয়েছে, নিশ্চয় উহা শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ইতেকাফ করতে চায়, সে যেন ইতেকাফ করে। ’ অতঃপর লোকেরা তার সঙ্গে ইতেকাফ করেছে।

ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘ইতেকাফ করা যে সুন্নত সে সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ আমার জানা নেই। ’ তাই কোরআন-সুন্নাহ ও ইজমার দলিলের ভিত্তিতে ইতেকাফ করা সুন্নত।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের মাঝের দশদিন ইতেকাফ করতেন। এক বছর এভাবে ইতেকাফ শেষ করার পর যখন রমজানের একুশতম রাত এলো- তখন তিনি ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে ইতেকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকে ইতেকাফ করে। কারণ আমাকে শবেকদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের অমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ... সুতরাং তোমরা শেষ দশকে শবেকদর খোঁজ কর। ’ -সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০২৭; সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ১১৬৭

সুতরাং বুঝা গেল যে, শেষ দশকে যে ইতেকাফ করবে তার শবেকদর নসিব হবে।

মাসয়ালা : সুন্নত ইতেকাফ দশ দিন। যাদের দশ দিন ইতেকাফ করার সুযোগ নেই বা সাহস হয় না তারা দুই তিন দিন নফল ইতেকাফ করতে পারেন। হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতেকাফ করবে আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের দূরত্ব থেকে অধিক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩৯৬৫

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। হজরত নাফে বলেন, আমাকে হজরত ইবনে উমর (রা.) ওই স্থানটি দেখিয়েছেন যে স্থানে নবী (সা.) ইতেকাফ করতেন। -মুসলিম শরিফ

মাসয়ালা : ইতেকাফের জন্য জরুরি হলো, মুসলমান হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। সুতরাং কাফের এবং মাতাল লোকের ইতেকাফ জায়েজ নেই। নাবালেগ তবে বুঝ হয়েছে- এমন বাচ্চা যেরূপ নামাজ, রোজা পালন করতে পারে, তেমনি ইতেকাফও করতে পারে। -বাদায়েউস সানায়ে

মাসয়ালা : ওয়াজিব ইতেকাফ এবং সুন্নাত ইতেকাফে শর্ত হলো রোজাদার হতে হবে। যার রোজা হবে না তার ইতেকাফ শুদ্ধ হবে না। তবে নফল ইতেকাফে রোজা আবশ্যক নয়।

মহিলাদের ইতেকাফ
মাসয়ালা : নারীরাও ঘরে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে ইতেকাফ করতে পারে। তবে তার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হায়েজ ও নেফাস থেকে পাক থাকতে হবে। তারা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতেকাফ করবেন। এটা মহিলাদের জন্য মসজিদের মতো। অর্থাৎ পানাহার, নিদ্রা সে জায়গায়ই করতে হবে। যদি শারীরিক বা শরয়ি কোনো প্রয়োজন না হয় তবে অত্র স্থান ত্যাগ করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।

যদি ঘরে শুরু থেকেই নামাজের স্থান নির্দিষ্ট থাকে তাহলে সেখানেই ইতেকাফ করবে। সেখান থেকে সরে অন্যত্র ইতেকাফে বসা জায়েয নেই। যদি আগে থেকে নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত না থাকে তবে ইতেকাফের সময় স্থান নির্ধারিত করে নেবে এবং সেখানে ইতেকাফ করবে। ঘর ছেড়ে মসজিদে ইতেকাফ করা মহিলাদের জন্য মাকরুহ। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১১

ইতেকাফ তিন প্রকার
সুন্নত ইতেকাফ : রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। -দুররে মুখতার: ২/৪৪০

২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতেকাফের সময়। কারণ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতেকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়।

ওয়াজিব ইতেকাফ
মান্নতের ইতেকাফ ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে। ’ -সূরা হজ: ২৯

তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন- কেউ বললো, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতেকাফ করবো’, এতে যেমন ইতেকাফ ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে- ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতেকাফ করবো’, এ অবস্থাতেও ইতেকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৩, দুররে মুখতার: ২/৪৪১

সুন্নাত ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

নফল ইতেকাফ
উপরোক্ত দুই প্রকার ইতেকাফ ছাড়া বাকি সব ইতেকাফ নফল। এ ইতেকাফ মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতেকাফের নিয়ত করা সুন্নত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘন্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।