আজ অনুষ্ঠিত হবে ২৫তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ২৮তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।
সূরা আল মুজাদালা
এটা মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৫৮। এর আয়াত সংখ্যা ২২টি। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো-
১-৫ নং আয়াতে জিহারের বিধান বর্ণিত হয়েছে। পুরুষের জন্য কিছু নারী এমন আছে যাদের বিয়ে করা তার জন্য চিরদিনের তরে হারাম। যেমন : মা, বোন, খালা, ফুফু ইত্যাদি। স্থায়ী হারাম নারীদের দেহের কিছু কিছু অঙ্গ এমন আছে যা ওই পুরুষের জন্য দেখা হারাম, সে পুরুষকে দেখানোও সে নারীর জন্য হারাম। যেমন : পেট, পিঠ, উরু ইত্যাদি।
জিহারের সংজ্ঞা
নিজ স্ত্রীকে স্থায়ী হারাম নারীর হারাম অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করাকে জিহার বলে। যেমন- স্ত্রীকে এ কথা বলা, তুমি কিংবা তোমার ওই অঙ্গ আমার মা-বোনের মতো তা তার ওই অঙ্গের মতো।
জিহারের হুকুম
জিহার করলে কাফফারা আদায়ের পূর্ব পর্যন্ত স্ত্রী মিলন হারাম থাকবে। আগে কাফফারা আদায় করতে হবে অতপর মিলন বৈধ হবে।
জিহারের কাফফারা
একটি কৃতদাস মুক্ত করতে হবে। তা সম্ভব না হলে একাধারে দু’মাস রোজা রাখতে হবে। তা সম্ভব না হলে ষাটজন দরিদ্রকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট
ইসলাম পূর্ব সময়ে জিহারকে তালাকের একটি প্রকার গণ্য করা হত। জিহার করলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যেত। একবার আউস ইবনে সামেত রাগান্বিত হয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন, তুমি আমার মায়ের পিঠের মতো। তার স্ত্রী খাউলা বিষয়টি নিয়ে নবী করিম (সা.)-এর স্মরণাপন্ন হলেন। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, এ ব্যপারে আমার প্রতি এখনো কোনো বিধান অবতীর্ণ হয়নি। আমি কী বলব? এর কিছুক্ষণ পরই এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।
আয়াতের সারকথা
এ আয়াতগুলো জিহারের ব্যপারে ইসলাম পূর্ব প্রথাকে রহিত করে দিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বহাল রাখল। তবে এত বড় জঘন্য কথা বলার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করল।
প্রাসঙ্গিক কথা
কেউ স্ত্রীকে স্থায়ী হারাম এমন কোনো নারীর হারাম অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করল না। কিন্তু স্থায়ী হারাম নারীর (ব্যক্তির) সঙ্গে সঙ্গে তুলনা করল। যেমন : বলল, তুমি আমার মা। অথবা বলল, তুমি আমার বোন। অথবা বলল, তুমি আমার মায়ের মত। এক্ষেত্রে তার কাছে উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করা হবে। সে যে উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছে। তা-ই প্রযোজ্য হবে। সে যদি তালাক দেয়ার উদ্দেশ্যে বলে থাকে তবে তালাক পতিত হবে। জিহারের উদ্দেশ্যে বলে থাকলে জিহার হবে। আর যদি মায়ের স্নেহ, বা বোনের মমতা বা তাদের চারিত্রিক কোনো গুণের সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্যে বলে থাকে তবে সেভাবেই ধরে নেয়া হবে।
১১নং আয়াতে বৈঠক বা মজলিশের আদব শিখানো হয়েছে। কোনো মজলিশে পরে আসা আগন্তুকরা বসার স্থান না পেলে আগে থেকে যারা বসে আছে তারা নড়ে-চড়ে নতুনদের জায়গা করে দিবে।
সূরা হাশর
এটা মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৫৯। এর আয়াত সংখ্যা ২৪টি। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো-
১-৫নং আয়াতে ইহুতি গোত্র বনু নাজিরকে দেশ থেকে বহিস্কারের ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট
মদিনা থেকে দুই মাইল দূরে বনু নাজিরের বসবাস। তারা নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। এমতাবস্থায়া নবী করিম (সা.) তাদের মহল্লায় গেলে তারা তাঁকে একটি ছাদের নীচে বসতে দেয়। পরে ছাদ থেকে পাথর গড়িয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহতায়ালা ওহির মাধ্যমে তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি ওই স্থান থেকে সরে পড়েন। তাদের জানিয়ে দেন, তোমরা চুক্তি ভঙ্গ করেছ। তোমাদের দশ দিনের সময় দেয়া হল। যেখানে ইচ্ছা চলে যাও। এরপরে তোমাদের কাউকে পাওয়া গেলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। মুনাফিক সর্দারের প্ররোচনায় তারা দেশত্যাগ করল না। নবী করিম (সা.) ৪র্থ হিজরির রবিউল আউআল মাসে তাদের মহল্লা ঘেরাও করেন। নিরুপায় হয়ে তারা নত স্বীকার করলে নবী করিম (সা.) আবারো তাদের সুযোগ দিলেন। বললেন, অস্ত্র ব্যতীত যে পরিমাণ জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে পারবে- তা নিয়ে এখনই এলাকা ত্যাগ কর। আদেশ মোতাবেক তারা দেশত্যাগ করল। তাদের কেউ খায়বার উপত্যকা আবার কেউ সিরিয়ায় চলে যায়।
সূরা আল মুমতাহিনা
সূরা আল মুমতাহিনা মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬০, আয়াত সংখ্যা ১৩টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১নং আয়াতে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
১০নং আয়াতে কাফের-মুসলিম আন্তধর্ম বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সূরা আস-সফ
সূরা আস-সফ মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬১, আয়াত সংখ্যা ১৪টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১০-১৪নং আয়াতে জিহাদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহতায়ালা হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ রাসূল প্রেরণ করেছেন। যেন সকল মতাদর্শ ও মতবাদের ওপর দ্বীন ইসলামকে তিনি বিজয়ী করেন। যদিও ইসলামের বিজয়কে অমুসলিমরা অপছন্দ করবে।
১৪নং আয়াতে মুমিনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করো। ইসলামের হেফাজত করো।
সূরা অাল জুমুআ
সূরা অাল জুমুআ মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬২, আয়াত সংখ্যা ১১টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আয়াত হলো-
৯নং আয়াতে বিধান দেয়া হয়েছে, জুমার নামাজের আজান হয়ে যাওয়ার পর জুমার প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও জুমার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা ওয়াজিব। এ সময় বেচাকেনাসহ বাকি সব কাজ ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
১০নং আয়াতে নামাজ বলা হয়েছে, নামাজ শেষ হওয়ার পর আবার জীবিকার তালাশে চলে যেতে পার।
সূরা অাল মুনাফিকুন
সূরা অাল মুনাফিকুন মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬৩, আয়াত সংখ্যা ১৩টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্তুতি যেন আল্লাহর জিকির ও নামাজের ব্যপারে তোমাদের অলস করে না দেয়। যদি এমনটি হয় তবে তোমরা জীবনে চরম ব্যর্থ হবে।
১০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি তোমাদের যা দিয়েছি (সম্পদ) মৃত্যু আসার আগেই তা থেকে দান করো।
সূরা আত তাগাবুন
সূরা আত তাগাবুন মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬৪, আয়াত সংখ্যা ১৮টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১৪নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অনেক সময় অনেকের স্ত্রী-সন্তান তাকে কষ্ট দেয় তাদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে। আর যদি তাদের ক্ষমা করো, তাদের কষ্টদায়ক আচরণগুলো এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহতায়ালা তোমাকে ক্ষমা করবেন তোমার প্রতি অনুগ্রহশীল হবেন।
সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব
এ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর ক্রমিক নং ৬৫, আয়াত সংখ্যা ১২টি। সূরা আত্ব-ত্বালাক্বের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১-৭নং আয়াতে তালাক ও ইদ্দতের বিধান দেয়া হয়েছে। তালাকের পর ইদ্দতের হিসাব করে রাখতে বলা হয়েছে। গর্ভবতী নারীর ইদ্দত সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। আর ঋতুবতী নারীর ইদ্দত তিন ঋতু পর্যন্ত। যাদের ঋতুস্রাব হয় না, তাদের ইদ্দত তিন মাস। ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা স্বামীকে করতে হবে।
তালাক ও ইদ্দতের ব্যপারে আল্লাহতায়ালার দেয়া বিধানের বাইরে যেয়ে স্ত্রীর ওপর কোনোরূপ জুলুম-নির্যাতন ও হয়রানি করার সুযোগ নেই।
সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু স্ত্রীর ভবিষ্যত বাহ্যিকভাবে অন্ধকার হয়ে যায় সেহেতু আল্লাহতায়ালা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে, আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করেই দিবেন। এমন জায়গা থেকে তাকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন- যা সে কল্পনাও করত না। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ’
সূরা আত তাহরিম
সূরা আত তাহরিম মাদানি সূরা। এর ক্রমিক নং ৬৬, আয়াত সংখ্যা ১২টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১নং আয়াতে আল্লাহর দেয়া হালালকে হারাম করতে নিষেধ করা হয়েছে।
২নং আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কেউ যদি কোনো হালালকে নিজের ওপর হারাম করার শপথ করে তবে অবশ্যই তাকে সে শপথ ভাঙতে হবে। শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর কৃত হালালকে গ্রহণ করতে হবে।
৬নং আয়াতে ঈমানদার পুরুষদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘন্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এমএ/