ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আল্লামা জালালুদ্দীন আল কাদেরী

রমজানে বেহেশতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
রমজানে বেহেশতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়

চট্টগ্রাম: অধ্যক্ষ আল্লামা মোহাম্মদ জালালুদ্দীন আল কাদেরী। ১৯৭১ সালের ৭ জুন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৮০ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত এ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৬ সালে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে যোগদান করে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। দায়িত্ব পালনকালে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জামেয়া আহমদিয়া তিনবার দেশের শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা আর জালালুদ্দীন আল কাদেরী শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় খতিব কাউন্সিলের সভাপতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আঞ্জুমান-ই-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের নির্বাহি সদস্য এবং মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাতের সম্পাদক। কোরআন-হাদিসের আলোকে মাহে রমজানের ফজিলত, রমজানের শিক্ষা এবং করণীয় নিয়ে জালালুদ্দীন আল কাদেরী'র সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মো. মহিউদ্দিন

আল্লামা জালালুদ্দীন আল কাদেরী আলাপচারিতার কোরআন-হাদিসের উদৃতি দিয়ে বলেন, পবিত্র রমজানের আগমনে আল্লাহতায়ালা রহমতের সব দরজা খুলে দেন। অন্যদিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজা। আল্লাহর কুদরতি ক্ষমতায় শিকলবন্দি করা হয় অভিশপ্ত শয়তানকে। পবিত্র রমজানে মানুষের ওপর থেকে শয়তানের প্রভাব কমে যায়। ফলে মানুষ পাপাচার থেকে বিরত থেকে নেক আমলের (ভালো কাজ) দিকে ধাবিত হয়।

তিনি বলেন, মসজিদে বেড়ে যায় মুসল্লির সংখ্যা, কাতারে কাতারে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়ে। ফলে রমজানে পাপাচার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে মানুষ। মনে হয় যেন রমজানের আগমনে দুনিয়াতে বেহেশতি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

পবিত্র রমজান মাসের ত্রিশ রোজাকে আল্লাহ তিনভাগে ভাগ করেছেন জানিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র এই গভর্নর বলেন, রমজান মাস রহমতের মাস। এই মাসকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দশকে ভাগ করেছেন। রমজানের প্রথম দশক হলো রহমতের, মধ্য দশক হলো মাগফিরাতের, শেষ দশক হলো নাজাতের।

ইফতারে ভ্রাতৃত্ববোধ
মুসলমানরা সারাদিন রোজা রেখে মাগরিবের আযান দিলে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ইফতার গ্রহণ করেন। ইফতারের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ পরিলক্ষিত হয়।

আল্লামা জালালুদ্দিন বলেন, যদি কোনো মুসলমান একজন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে রোজাদারের সমতুল্য সওয়াব আল্লাহ তাকে দেবেন। এতে রোজাদারের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। তাই রোজাদারদের ইফতার করানো ইসলামে একটি উত্তম কাজ।

তারাবি পড়তে হবে ২০ রাকাত
এশার নামাজের পর ২০ রাকাত তারাবির নামাজ খতমে কোরআনের সঙ্গে পড়া অতীব সওয়াবের কাজ উল্লেখ করে এই মুহাদ্দিস বলেন, হজরত ওমর ফারুক (রা.) তার খেলাফতের আমলে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ হাফেজে কোরআনের পেছনে জামাতসহ আদায় করেছেন।

তিনি বলেন, হাজার হাজার সাহাবায়ে কেরাম এই ইবাদতে অংশগ্রহণ করেন। তামাম (সমস্ত) সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাত সহকারে আদায় করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তার বিপরীতে কোনো মন্তব্য কাম্য নয়।

গোনাহ মাফ চাওয়ার মাস
রমজানে যতবেশি সম্ভব কোরঅান তেলাওয়াত করার পরামর্শ দিয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক এই অধ্যক্ষ বলেন, মাহে রমজান মোবারকে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত বহুগুণ বেশি। যতবেশি সম্ভব দরুদ শরীফ পড়ার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে রহমত কামনায় গোনাহের মাফ চাওয়া উচিত। রমজানে রোজাদারদের আবেদন আল্লাহতায়ালা কবুল করেন।
 
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ পাক হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, রোজা আমার জন্য; তার বদলা স্বয়ং আমি নিজেই’।

রোজায় পণ্যের দাম সহজলভ্য করা উচিত
রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়ানো ইসলাম সম্মত নয় জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় খতিব কাউন্সিলের সভাপতি, পৃথিবীর সব দেশে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে মানুষের সুবিধার জন্য সব ধরনের পণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। ‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে রমজান এলে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। ’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মাহে রমজানের আগমন উপলক্ষ্যে এবং রমজানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পণ্যের দাম সহজলভ্য করে দিন। যাতে রমজানে ইফতার ও সেহেরি খেয়ে রোজা রাখা সহজ হয়।  

ভালো কাজে সত্তরগুণ বেশি সওয়াব
রমজানে নেক আমলের (ভালো কাজের) সওয়াব সত্তরগুণ বেশি জানিয়ে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব জালালুদ্দিন বলেন, যারা ধনী তারা যেন হিসেব নিকেশ করে জাকাত আদায় করে। কারণ রমজানে যে কোনো ভালো কাজের সওয়াব সত্তরগুণ বেশি।
 
তিনি কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দারিদ্রতা দূর করতে আল্লাহ জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। ধনী ব্যক্তিরা যাতে তাদের ওপর ধার্য জাকাত গরীবদের মাঝে দেয়। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের সঠিকভাবে জাকাত আদায় করা ফরজ বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমইউ/টিসি/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।