ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবিতে ঘোষিত হবে একনিষ্ঠ তওবার পুরস্কার

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
আজ তারাবিতে ঘোষিত হবে একনিষ্ঠ তওবার পুরস্কার

আজকের ১৩তম খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে, তওবার পুরস্কার। সূরা মরিয়মের ৫৯-৬০ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা।

তারা নামাজ নষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের ওপর কোনো জুলুম করা হবে না। ’

মানুষ মাত্রই গোনাহ করে। গোনাহ হলো- আল্লাহতায়ালার হুকুম অমান্য করা। এ বাস্তবতার প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝে আসে, আল্লাহতায়ালা যদি মাফ না করেন তবে একটি গোনাহই মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আল্লাহতায়ালা অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই তিনি সদয় হয়ে আমাদের মতো পাপী বান্দাদের জন্য তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। বান্দা মন থেকে তওবা করলে তিনি মাফ করদেন ও মাফ করবেন।

পবিত্র কোরআনের আরও অনেক স্থানে তওবা করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ‘গোনাহ করার পর যে ব্যক্তি তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। ’ –সূরা মায়িদা: ৩৯

‘আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহ বিশ্বাস করে তখন আপনি বলে দিন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা সদয় হয়ে লিখে দিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অজ্ঞতাবশত কোনো গুনাহ করার পর তওবা করে এবং নেককার হয়ে যায়; তবে আল্লাহর তার প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়। -সূরা আনআম: ৫৪

‘অতএব, তুমি এবং তোমার সঙ্গে যারা তওবা করেছে, তারা সোজা পথে চলো, যেমন তোমায় হুকুম করা হয়েছে। সীমা লঙ্ঘন করবে না। তোমরা যা কিছু করছ, নিশ্চয়ই তিনি তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন। ’ –সূরা হুদ: ১১২

‘আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। ’ –সূরা ত্ব-হা: ৮২

‘কিন্তু যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে আল্লাহ তাদের গোনাহকে সওয়াব দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। ’ –সূরা ফোরকান: ৭০

‘তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও নেক আমল করে আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে। ’ –সূরা কাসাস: ৬৭

‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো- আন্তরিকভাবে তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন। এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। ’ –সূরা আত তাহরিম: ৮

মহানবী সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ওই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা যদি গোনাহ না করো; তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহ করবে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তিনি তাদের ক্ষমা করবেন। ’ –সহিহ মুসলিম: ৭১৪১
‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন সত্তরের চেয়ে বেশি বার আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করি ও তওবা করি। ’ –সহিহ বোখারি: ৬৩০৭

আলেমদের মতে, তওবা কবুল হওয়ার জন্য তিনটি বিষয় আবশ্যক। কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ভবিষ্যতে ওই গোনাহ না করার ব্যাপারে সংকল্প করতে হবে। তওবা করার পর যদি সংকল্প ভেঙে যায়, আবার গোনাহ হয়ে যায়, তবে আবারও তওবা করতে হবে। যতবার গোনাহ হবে ততো বার তওবা করতে হবে। এভাবে এক দিনে যদি একই গোনাহ সত্তর বার হয়; আর সত্তর বার তওবা করা হয় তাতেও কোনো  সমস্যা নেই। তওবা করার সুযোগ থাকে। তবে তওবা করার সময় খাঁটিভাবে তওবা করতে হবে। গোনাহ না করার সদিচ্ছা থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘন্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।