মাওলার কুদরতি কদমে অসংখ্যবার লুটিয়ে পড়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এজন্য যে, তিনি আমাদের প্রেমের মাস রমজানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। রমজান এলো মৃত আত্মাকে জাগিয়ে দিতে।
রাসুল (সা.) বলেন, ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে যে ব্যক্তি সিয়াম আদায় করবে, তার আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের প্রথম রাত এলে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শেকলবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কোনও দরজা আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর কোনও দরজা আর বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, ‘হে কল্যাণ প্রার্থী, তুমি এগিয়ে এসো। আর হে অকল্যাণ প্রত্যাশী, তুমি নিবৃত্ত হও। এ মাসে আল্লাহ অনেককে মুক্তি দেবেন’। প্রতিটি রাতে এভাবে ঘোষণা চলতে থাকে।
রমজান মুমিনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ১১ মাস দুনিয়ার কর্মব্যস্ততায় যাদের ঈমানের প্রদীপ নিষ্প্রভ হয়ে এসেছে। যাদের আত্মায় পাপাচারের কালো দাগ পড়েছে, কঠিন মরিচা ধরেছে যাদের কলবে- রমজান এলো এই মরিচা আর দাগ দূর করতে। খোদার রহমতের পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন করতে, রূহের ঘরে জমে থাকা সব ধুলা-বালু আর আবর্জনাকে সাফ করতে। তাই রমজানের প্রথম থেকেই খোদার রহমতের তালাশে নিজেকে সর্বোতভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া হবে মুমিনের একমাত্র কাজ।
মাহে রমজানের এই খোদায়ী প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রধান বিষয়বস্তু হল আত্মসংযম। আমাদের সমাজে রোজাদারের অভাব নেই, কিন্তু সংযমী লোকের বড়ই অভাব। শুধু উপবাস বা পেটের সংযমে আমরা শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি সফল হলেও জিহ্বার সংযম, হাত-পায়ের সংযম, যৌনাঙ্গের সংযম, প্রবৃত্তির সংযম, আত্মা বা রুহের সংযম, অর্থনৈতিক সংযমে আমরা প্রায় শতভাগই বিফল। আমাদের ধারণা সকাল-সন্ধ্যা না খেয়ে থাকার নামই সিয়াম। কিন্তু আমার জিহ্বাকে অশ্লীল ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে, আমার হাত এবং পাকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে, আমার জীবিকাকে অবৈধ উপার্জন থেকে হেফাজত করাই যে প্রকৃত সিয়াম তা আমরা ক’জনে উপলব্ধি করি!
নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, অনেক সিয়াম পালনকারী এমন রয়েছে যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকা বৃথা যায়। (ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট ছাড়া কিছুই পায় না তারা) তেমনি অনেক ইবাদতকারী এমন যাদের বিনিদ্র রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই অর্জন হয় না। (ইবনে হিব্বান/মুসনাদে আহমদ) নবীজীর (সা.) এই হাদিসটি আত্মসংযমের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করছে। তাই রহমতের এই মাসে আত্মসংযমের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করতে হবে আমাদের। তাহলেই আমরা হতে পারবো প্রকৃত সিয়াম সাধক। আমরা পাবো আল্লাহর নৈকট্য। রমজানের রহমতে বদলাবে আমাদের জীবন ও সমাজ।
লেখক
বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি
www.selimazadi.com
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৮
এইচএ/