দয়াময় মাবুদ আলোচ্য আয়াতে রমজানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। মাসব্যাপী সিয়ামব্রত পালনের মাধ্যমে মুত্তাকি হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান করেছেন মুমিনদের প্রতি।
যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, সে আকার-আকৃতির মানুষ হলেও নিকৃষ্ট পশুর চেয়েও নিচু। নির্লজ্জ মানুষ যেমন যা খুশি তা-ই বলতে পারে, তেমনি যে আল্লাহকে ভয় করে না, অন্যায় ও অনৈতিক কোনও কাজই তার বিবেকে বাধে না। এজন্য ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ইনসাফপূর্ণ আদর্শ সমাজ বা রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া। যে সমাজে তাকওয়া বা খোদাভীতি থাকবে সেই সমাজে এমনি এমনিই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে।
আজ আমাদের সমাজ যেভাবে অন্যায়, অনাচার ও পাপাচারে প্লাবিত হয়ে আছে, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে ঘুষ-দুর্নীতি ছেয়ে আছে, তা থেকে পরিত্রাণের একটিই পথ- খোদাভীতি বা তাকওয়া। দয়াময় মাবুদ মূলত মোবারক মাস রমজান দান করেছেন আমাদের তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে মুত্তাকি বানানোর জন্য। জগতের প্রতিটি প্রশিক্ষণের একটি বিষয়বস্তু থাকে, থাকে একটি সিলেবাস। আল্লাহ আমাদের রমজানের সিয়াম সাধনার এই প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন তাকওয়া, আর এজন্য আমাদের সামনে একটি সিলেবাস দিয়েছেন- সেটি হল আল কোরআন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা কতই না সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন- এটি বরকতময় কিতাব, যা আমি নাজিল করেছি। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। (সূরা আনআম-১৫৫)
কোরআনের অনুসরণের মধ্যেই তাকওয়া লুকিয়ে রয়েছে। আমাদের অনেকেই মনে করি শুধু নামাজ, রোজা পালন করলেই মুত্তাকি হওয়া যায়। বাস্তবতা হল নামাজ-রোজা ইত্যাদি হল কোরআন নির্দেশিত মুত্তাকি হওয়ার কিছু মাধ্যম। কোরআনের পরিপূর্ণ অনুসারী একজন মুমিনই হতে পারে প্রকৃত মুত্তাকি। আমি নামাজ পড়ি ঘুষ খাই, রোজা রাখি দুর্নীতি করি, তাহলে আমি পরিপূর্ণভাবে কোরআনের অনুসরণ করতে পারিনি, সুতরাং আমি মুত্তাকিও হতে পারিনি।
কোরআন একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। একজন মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয়-আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ পথনির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কোরআনে। তাই একজন মুমিনের জন্য আবশ্যক হল জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কোরআনের অনুসরণ করা।
কোরআন পড়ে, কোরআনের অনুসরণ করে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য রমজান মাওলার পক্ষ থেকে মুমিনের প্রতি বিশেষ হাদিয়া। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সূরা তাওবা-১১৯)
অন্যত্র বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, সেই সফলকাম। (সূরা নূর-৫২)
লেখক
বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
এইচএ/