ঢাকা, বুধবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে সাজা দিলেন ইউএনও

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে সাজা দিলেন ইউএনও কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপু ও তালা ইউএনও শেখ মো. রাসেল।

অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাওয়ায় সাতক্ষীরার তালায় দৈনিক কালের কণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. রাসেল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ড দেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

জানা গেছে, তালা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের নয় কোটি টাকার প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু।

এ সময় তালা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলম তথ্য দিতে অস্বীকার করায় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সাংবাদিককে ‘তথ্য জানার কে’— এমন প্রশ্ন করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এরপর উভয়পক্ষ ঘটনাটি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সরেজমিনে উপস্থিত শ্রমিকসহ স্থানীয়দের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ রায়কে ‘সাজানো নাটক’ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।

সংগঠনটি প্রশ্ন রেখে বলেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতস্থলে যারা ছিল তারা কি কেউ নিরপেক্ষ ছিল? মামলার সঙ্গে জড়িত সবাই ঠিকাদারের শ্রমিক এবং প্রশাসনের লোক। প্রশাসনের উচিত ছিল ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের দূরত্বের ঝাল মিটিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

এ বিষয়ে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু বলেন, কাজের মান খারাপ হচ্ছে, কাদা মেশানো খোয়া দেওয়া হচ্ছে, সিমেন্ট কম দেওয়া হচ্ছে— এমন খবরের ভিত্তিতে আমি সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই।

এ সময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলম আমাকে কোনো সহযোগিতা না করে বলেন, ‘তুই জানার কে?’ এরপর ছাতা দিয়ে মারতে শুরু করেন। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে গেলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

তালা উপজেলা প্রকৌশলী রথিন্দ্র নাথ হালদার বলেন, এ সময় আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম। অফিসে ফিরে শুনি আমার অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে।

ইউএনও শেখ মো. রাসেল বলেন, একজন সাংবাদিক আমার একজন কর্মকর্তাকে মারধর করেছে— এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত শ্রমিকদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে ঘটনার সত্যতা পাই। এজন্য অভিযুক্তকে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের সাজা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এম হাকিম, সাধারণ সম্পাদক জোয়ার্দ্দার ফারুক হোসেনসহ তালার কর্তব্যরত সাংবাদিকরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ম্যাজিস্ট্রেট এবং উপজেলা প্রকৌশলী তথ্য অধিকার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর।  

তিনি বলেন, সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিয়ে তারা দুর্নীতি ও অনিয়মকে উসকে দিয়েছেন, যা দেশের জন্য একটি অশুভ ইঙ্গিত।

এ ঘটনার প্রতিবাদে তালায় আগামী বুধবার (২৩ এপ্রিল) মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, তালা উপজেলা শাখা।  

তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এম হাকিম বলেন, এ ধরনের সাজা দেওয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। দুর্নীতির সংবাদ তৈরির জন্য সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করতে যাবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে উল্টো কেন সাজা দেওয়া হবে?

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জোয়ার্দ্দার ফারুক হোসেন বলেন, কর্মরত সব সাংবাদিক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকসহ তালার সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। তাই তারা প্রতিবাদ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।